হোসে ব্যারেটোর পরিবারের কাছে এগিয়ে গিয়ে ক্রিসমাসের ছুটিটা গোয়ায় তাঁর বাড়িতে কাটিয়ে আসার অনুরোধ করলেন এডে চিডি।
মোহনবাগান থেকে বিতাড়িত ইসফাক আমেদ, বিশ্বজিৎ সাহাদের দেখা গেল পুরনো দলের বন্ধুদের সঙ্গে গলাগলি করতে।
দুর্লভতম আরও একটি দৃশ্য দেখা গেল ম্যাচের পর। ওডাফা ওকোলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফেললেন এক সময়ের ‘চরম শত্রু’ করিম বেঞ্চারিফাও! ‘ফিল গুড’ এই পরিবেশের মধ্যেও জারি থাকল সুব্রত ভট্টাচার্য বনাম করিম বেঞ্চারিফা বিরামহীন যুদ্ধ! যা চলছে গত দু’দিন ধরে। নানা অছিলায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সালগাওকর কোচ কার্যত বলে দিলেন, তাঁর বিছিয়ে দেওয়া জালে ধরা পড়েছে মোহনবাগান। “আমি ওদের সব ক’টা দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম বলে ওরা মাঝখানে লং বল খেলতে বাধ্য হয়েছিল। এটাই আমি চেয়েছিলাম। মাঝমাঠটা আমরা তো দখলই করে নিয়েছিলাম। গোলগুলো হলে তিন পয়েন্ট পেতে পারতাম।” কিছুক্ষণ পর তা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। “আমার প্ল্যানিংও তো পুরো সফল। চিডি আর সুয়েকা গোল করতে পেরেছে? জাল তো আমিই পেতেছিলাম। আমার ছয়-সাত জন প্রথম টিমের ফুটবলার নেই। সালগাওকরের তো পুরো টিম ছিল। হারাতে পারল? এই টিমটাই তো ফেড কাপে একে ওকে তিন-চার গোল দিয়েছে। বোকা বোকা সব কথাবার্তা।”
যুবভারতীতে নব্বই মিনিট ওডাফা-চিডিরা বোতল থেকে যত বার জল খেলেন, রিজার্ভ বেঞ্চে দাঁড়িয়ে তার দ্বিগুণ খেলেন দুই কোচ। লড়াইটা এত তীব্র ছিল যে, ভরা শীতের এই বাজারেও টেনশনে তাঁদের গলা শুকিয়ে কাঠ। মাঠের বাইরে ‘কথার বোমা-গুলি’ চালিয়ে গেলেও মনে হল, এক পয়েন্ট পেয়েই দু’জনে খুশি। তা লিগ টেবিলে যে ক্ষতিই হোক। কাজের দিনেও যে হাজার তিরিশেক মোহন-সমর্থক খেলা দেখতে এসেছিলেন তাঁদের চোখে-মুখে কিন্তু আশঙ্কার ছোঁয়া। লিগ টেবিলে তিন নম্বরে টিঁকে থাকা গেলেও, আজ কোচিতে চিরাগ কেরলকে হারালেই ওই জায়গাটা নিয়ে নেবে ট্রেভর মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গল। |
শত্রুতা ভুলে এখন বন্ধু! ম্যাচের পর ওডাফা ও করিম। ছবি: উৎপল সরকার |
স্ট্র্যাটেজি তৈরির সময় কোচেরা মাঠকে তিনটে ভাগে ভাগ করেন। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের নব্বই মিনিটও ভাগ করা যেতে পারে তিনটে ভাগে। সতর্ক, সামান্য খোলামেলা এবং অতি সতর্ক। প্রথম অর্ধ দু’টি টিমই প্রতিপক্ষকে মাপল সতর্ক ভাবে। পরের তিরিশ মিনিট সামান্য খোলামেলাআক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে গোলের দরজা খুলল। শেষ অর্ধে নিজেদের গোলের মুখ বন্ধ করে দিল দু’টো টিমই। খেলাটা তাই কখনও উচ্চমানে পৌঁছল না। বারবার মনে হচ্ছিল রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে রিমোটে দুই কোচই রিওয়াইন্ড করছেন তাঁদের টিমকে। মোহনবাগানীদের রিং-টোনে থাকা, ‘আমাদের সূর্য মেরুন নয়’, ম্যাচের থিম সং হয়ে বাজল--- “জিততে না পারো, হেরে যেয়ো না।” যাতে ৪-৪-২ ফর্মেশন কখনও হল ৫-৪-১। কখনও বা ৫-৫-০। গোলমেশিন ওকোলি ওডাফাও নিজের রক্ষণ সামলাতে নামলেন নীচে। সম্ভবত জীবনে প্রথম বার। সালগাওকরের সুয়েকা-চিডিকেও দেখা গেল, লুসিয়ানো-খেলেম্বা মিতাইদের সাহায্য করতে।
মোহনবাগানের উইং প্লে আটকাতে নিজের দুটো উইংকেই ভোঁতা করে দিলেন করিম। আবার চিডি-সুয়েকার জন্য মণীশ-জুয়েলকে দিয়ে জোড়া মার্কিং করাতে গিয়ে নিজের আক্রমণের রাস্তাটাই বন্ধ করলেন সুব্রত। খেলা তাই বেশির ভাগ সময় বন্দি রইল মাঝমাঠে। এর মাঝেই অবশ্য গোলের সহজতম সুযোগ এসেছিল দু’দলের সামনেই। গৌরাঙ্গ দত্তের ক্রস থেকে অসীম বিশ্বাসের ছবির মতো হেড রুখে দিলেন সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের গোলকিপার সালগাওকরের করণজিৎ সিংহ। আবার অ্যান্টনি বারবোসার নিশ্চিত গোল থামালেন মোহন-গোলকিপার সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়। গোলের জন্য দু’দলই তাকিয়ে ছিল সেই ওডাফা আর চিডির দিকে। তাঁদের সামনেও এসেছিল গোলের সুযোগ। তবে সেগুলো সবই হাফ চান্স।
আই লিগ ম্যাচের সেরা বাছা নিয়ে এ বার প্রায় প্রতি ম্যাচেই বিতর্ক হচ্ছে। ফেডারেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সংশ্লিষ্ট ম্যাচের ম্যাচ কমিশনারই বাছছেন সেরাকে! বাঁশি মুখে ম্যাচ পরিচালনা করলেও, যাঁদের বেশির ভাগই প্রথম শ্রেণির ফুটবল খেলেননি বা কোচিং পর্যন্ত করাননি। ফুটবলের টেকনিক্যাল জ্ঞান শূন্য। হাস্যকর এই ব্যবস্থার বলি হচ্ছেন ফুটবলাররা। এ দিন সেরা বাছা হল চিডিকে। যিনি গোটা তিনেক গোল নষ্ট করেছেন। পাওয়া উচিত ছিল লুসিয়ানো সাব্রোসার। সালগাওকর স্টপার তো নড়তেই দেননি ওডাফার মতো দেশের ভয়ঙ্করতম স্টাইকারকে।
মোহনবাগান: সংগ্রাম, সুরকুমার, রাকেশ, আনোয়ার, শৌভিক (ধনরাজন), নবি, জুয়েল (ব্যারেটো), মণীশ, স্নেহাশিস (গৌরাঙ্গ), অসীম এবং ওডাফা। |