|
|
|
|
হাওড়া |
ধাওয়া করে খুন প্রোমোটারকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জনবহুল বাজার এলাকায় দৌড়চ্ছেন এক ব্যক্তি। পিছনে রিভলভার ও ভোজালি নিয়ে তাড়া করেছে একদল দুষ্কৃতী। দৌড়তে দৌড়তে এক সময়ে প্রাণে বাঁচতে ওই ব্যক্তি ঢুকে পড়লেন একটি বাড়িতে। দুষ্কৃতীরাও ধাওয়া করে ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ল। সেখানেই গুলি করে, কুপিয়ে ওই ব্যক্তিকে খুন করে ভিড় করে থাকা লোকজনের মধ্যে দিয়েই হেঁটে পালিয়ে গেল তারা।
সিনেমার দৃশ্য নয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের চোখের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে সালকিয়ার শম্ভু হালদার লেনে। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। কয়েক ঘণ্টা পরেও প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।
পুলিশ জানায়, মৃত গৌতম রায় (৪০) পেশায় প্রোমোটার। তাঁর বুক, পিঠ ও পেটে পাঁচটি গুলি লাগে। হাতে ও মাথায় ছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাত। হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ দিকে, ঘটনার সময়ে আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে পড়ে গুরুতর জখম হন শঙ্করী ঘোষ (৭৫) নামে স্থানীয় এক বৃদ্ধা। তাঁকে জয়সোয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মালিপাঁচঘরা থানার সালকিয়া বাবুডাঙার এক আবাসনে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন গৌতম। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রোমোটারির ব্যবসায় যুক্ত। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দা বাবলু মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে মোটরবাইকে হাওড়া আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি। বাইক চালাচ্ছিলেন বাবলু। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, বাবুডাঙা থেকে বেরিয়ে শম্ভু হালদার লেন ধরে অরবিন্দ রোডের বাঁধাঘাট মোড়ে এলে ৮-১০ জন দুষ্কৃতী গৌতমদের পথ আটকায়। বাইক থেকে নেমে গৌতম জনবহুল শম্ভু হালদার লেনের দিকে ছুটতে শুরু করলে তাড়া করে দুষ্কৃতীরা। বাবলু মোটরবাইক নিয়ে পালান। তাঁকেও জেরা করছে পুলিশ।
বাজারের মধ্যে এক ব্যক্তির পিছনে অস্ত্র হাতে আরও কয়েক জনকে দৌড়তে দেখে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন পথচারীরা। কেউ ভয়ে দোকানের ভিতরে ঢুকে পড়েন। কেউ বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ করে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত বেরা বলেন, “ভয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছিলাম। পরে কয়েকটা গুলির আওয়াজ পাই। বেশ কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে শুনি এক জন খুন হয়েছেন।”
পুলিশ জানায়, তাড়া খেয়ে গৌতম শম্ভু হালদার লেনের একটি বাইলেনে ঢুকে পড়েন। সেই গলিতেই এক তিনতলা বাড়িতে ঢুকতে গেলে দুষ্কৃতীরা তাঁর পিঠে গুলি করে, ভোজালি দিয়ে আঘাত করে। ওই অবস্থাতেই গৌতম দোতলা পর্যন্ত ওঠেন। দুষ্কৃতীরা সেখানে গিয়েও গুলি চালায়। তার পরে পায়ে হেঁটেই ওই গলি দিয়ে পালায় তারা।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা বাড়ির সামনে মানুষের জটলা। দরজার সামনে রক্তের দাগ। সেখানেই পুলিশ রক্তমাখা চামড়া, মাংস উদ্ধার করেছে। ভিতরে একতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত সিঁড়িতে, দেওয়ালে চাপ চাপ রক্ত। এলাকার মানুষ বিশেষ মুখ খুলতে রাজি হননি। বাড়িটির বাসিন্দা মোনালিসা কর্মকার জানান, একতলায় একটি কারখানা আছে। এ দিন সেটি বন্ধ ছিল। দোতলার ঘরের কোল্যাপসিব্ল গেটে ছিল তালা। তবে বাড়ির সদর দরজা খোলাই ছিল। মোনালিসা বলেন, “ঘরে পড়ছিলাম। আচমকা পটকার মতো আওয়াজ। বাইরে চেঁচামেচিও হচ্ছিল। ভয়ে বেরোইনি। পরে দেখি সিঁড়িতে রক্ত ভর্তি।” পুলিশ জানায়, ঘটনার পরে স্থানীয় মানুষই গৌতমকে হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, শুধু ব্যবসা সংক্রান্ত ঝামেলা নয়,এই খুনের পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) সুকেশ জৈন বলেন, “কিছু সূত্র মিলেছে। মৃতের স্ত্রী লিখিত অভিযোগ করেছেন। সব দিক খতিয়ে দেখছি।” |
|
|
|
|
|