তৃণমূল-সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে ক্ষুব্ধ সিপিএম-নেতৃত্ব এ বার স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানাতে চাইছেন।
লোকপাল বিলে সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে আজ যে ভাবে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়াকে আক্রমণ করেছেন, তা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছে সিপিএম নেতৃত্ব। দুপুরে লোকসভায় এ বিষয়ে বাসুদেববাবুকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার। তাতেই খেপে ওঠেন কল্যাণবাবু। ওয়েলের কাছে নেমে এসে তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, “সিপিএম ছোট দল। কেন সিপিএমকে সব সময় আগে বলার সুযোগ দেওয়া হবে! আগে তৃণমূলকে বলতে দিতে হবে।” বাসুদেববাবু প্রথমে তাতে কান না দিয়ে লোকপালে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছিলেন। কিন্তু কল্যাণবাবু তাঁকে থামাতে ‘‘সিট ডাউন! বইঠ! বইঠ!’’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। অন্য দু’একজনও যোগ দেন। সিপিএমের অন্য সাংসদরা প্রতিবাদ জানান। দু’পক্ষের হট্টগোলে সংসদ দেড় ঘণ্টার জন্য মুলতুবি হয়ে যায়।
তৃণমূল সাংসদদের এ হেন আচরণে আজ অন্য দলের নেতারাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। স্পিকারের অফিসও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে বলে জানানো হয়েছে। বিশেষত কল্যাণবাবু এখন দলের মুখ্য সচেতক। কিন্তু সংসদের মধ্যে তাঁর আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা যথেষ্ট আপত্তিকর বলেই স্পিকারের অফিস মনে করছে বলে জানা গিয়েছে। এ বিষয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় পরে কল্যাণবাবুর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও দলীয় সূত্রের খবর। বাসুদেববাবু জানান, দীর্ঘ সাংসদ জীবনে তাঁর সঙ্গে কেউ কখনও এমন আচরণ করেননি। স্পিকারের কাছে কী ভাবে অভিযোগ জানানো যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রায়ই রাজ্য-রাজনীতির লড়াই উঠে আসত সংসদে। তৃণমূলের তরফ থেকে বরাবরই সিপিএমকে আক্রমণের দায়িত্বে থাকতেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনে পট বদলের পরও ছবিটা বদলায়নি। সিপিএমের বক্তব্য, রাজ্যের মতো সংসদেও তাঁরা সৌজন্য বজায় রেখে চলার পক্ষপাতী। কিন্তু তৃণমূল-সাংসদদের সে সবের বালাই নেই বলে তাদের অভিযোগ। বর্ষীয়ান সাংসদ বাসুদেববাবুর সঙ্গে তৃণমূল সাংসদের এ হেন আচরণের নিন্দা করেছেন সীতারাম ইয়েচুরিও। তৃণমূলকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ভুললে চলবে না, লোকসভায় বামফ্রন্টের তুলনায় এখনও তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা কম। ওদের ১৯ জন, আমরা ২৪ জন। তবে রেল দুর্ঘটনা-অগ্নিকাণ্ডে মৃতেরর সংখ্যায় ওদের রেকর্ডটা আমাদের থেকে অনেক ভাল।” কল্যাণবাবু অবশ্য অধিবেশন শুরুর পরে ফের সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে বলতে গিয়ে একই দাবি তোলেন। বলেন, সিপিএমের তুলনায় যেহেতু তৃণমূলের সাংসদ-সংখ্যা বেশি, তাই তৃণমূলকেই আগে বলার সুযোগ দিতে হবে। সিপিএমকে তাঁর কটাক্ষ, যারা ৩৪ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের নিচুতে ঠেলে রেখেছে, তাদের মুসলিম সংরক্ষণ নিয়ে কথা বলার কোনও অধিকার নেই। |