তাঁরা এক দিকে চাইছিলেন সরকারের বিলের বিরোধিতা করে অণ্ণা হজারেকে সঙ্গে থাকার বার্তা দিতে। অন্য দিকে, আবার সুর এতটাও চড়াতে চাইছিলেন না যাতে, বিল আটকে যায়। আর তার দায় তাঁদের ঘাড়ে পড়ে। কিন্তু লালু-মুলায়ম সংখ্যালঘু সংরক্ষণের কথা তুলে বিজেপির দ্বিমুখী কৌশল বলতে গেলে ভেস্তেই দিলেন। দোলাচলের মধ্যে পড়ে বিজেপি জরুরি বৈঠক করল। চেষ্টা করল সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার। শেষে সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধিতার সুর চড়াতে বাধ্য হল।
এ দিন সকালে যখন সংখ্যালঘু সংরক্ষণের বিষয়টি ওঠে, বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, সরকার বিল পাশ করাতে আগ্রহী নয়। তাই লালু-মুলায়মদের পিছনে তারা কলকাঠি নাড়ছে। কিন্তু কয়েক দফা সংসদ অচল থাকার পর সনিয়া-মনমোহনরা বৈঠকে বসে সাত তাড়াতাড়ি বিষয়টি মেনে নেন। আর ভারসাম্য হারিয়ে যায় বিজেপির।
রণকৌশল ঠিক করতে তড়িঘড়ি সংসদে লালকৃষ্ণ আডবাণীর কক্ষে বৈঠকে বসেন সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলিরা। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা জানান, “দায়িত্বশীল প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আমরা সরকারকে সহযোগিতাই করতে চাই। পেনশন বিলে সরকারের শরিক তৃণমূল সমর্থন না করলেও আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু সরকার যদি লালু-মুলায়মকে সামনে রেখে লোকপালে ধর্মের নামে সংরক্ষণ আনে, তা হলে আমাদের কঠোর বিরোধিতা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
বৈঠকের মধ্যে আডবাণী ফোন করেন লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। আডবাণী তাঁকে জানান, “ধর্মের নামে সংরক্ষণ হলে আমাদের কঠোর বিরোধিতা করা ছাড়া পথ নেই। সরকার যদি এই পদক্ষেপ করে, তা হলে বিরোধীদের থেকে সহযোগিতার প্রত্যাশাও তাদের ত্যাগ করতে হবে।” প্রণব আডবাণীকে জানান, সরকার আগেও লোকপালে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের উল্লেখ করেছিল। এ বার সেটিই বলবৎ হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব এ কথা মানছেন না। তাঁদের এক নেতার কথায়, “উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুলায়মদের সুবিধা পাইয়ে দিতে সরকার সুকৌশলে লোকপালের বিতর্কের অভিমুখ সংখ্যালঘু সংরক্ষণের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। এক চালে সরকার সহযোগী দলগুলির সমর্থন হাসিলের চেষ্টা করল।”
এর পরে সংসদের অধিবেশন যখন ফের শুরু হয়, সুষমা স্বরাজ থেকে যশবন্ত সিনহা, সকলেই এই বিষয়ে সরকারকে আক্রমণ করেন। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিও সেই সময় লোকসভার দর্শক আসনে ছুটে আসেন। সুষমা বলেন, “ধর্মের নামে কোনও সংরক্ষণ সংবিধানে স্বীকৃত নয়। আদালতেও এই আইন টিকবে না।” কিন্তু প্রণববাবু যুক্তি দেন, আদালত কী রায় দেবে, সেটি সংসদে আগাম ধরে নেওয়ার কোনও অর্থ হয় না। সুষমার পাল্টা বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন বা সিভিসি-র মতো প্রতিষ্ঠানেও এ ধরনের সংরক্ষণের রেওয়াজ নেই। তা হলে লোকপালে থাকবে কেন? ঘরোয়া স্তরে অবশ্য বিজেপি নেতারা মনে করছেন, সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে এর পর লালু-মুলায়মের সঙ্গে কংগ্রেসেরও কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যাবে। তাতে হিন্দু ভোট সংগঠিত করতে সুবিধা হবে বিজেপির। সংসদে বিলের ভবিষ্যৎ যা-ই হোক, এ বারে সড়কে নেমে সরকারের সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতিকেই বড় করে তুলে ধরাই হবে শ্রেষ্ঠ পথ। |