এ বছর দুর্গাপুজোর আগে থেকেই বিষ্ণুপুরের তিনটি ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে রাতে আলোর যান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়েছে। এখনও তা মেরামত করায় উদ্যোগী না হওয়ায় পর্যটকেরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার ক্ষোভ, “চলতি সেপ্টেম্বর থেকে রাসমঞ্চ, শ্যামরাই ও জোড়বাংলা মন্দিরে রাতে আলো জ্বলছে না। রাজ্য পর্যটন দফতরকে মহকুমাশাসকের দফতর থেকে একাধিকবার ফোন করে জানানো হয়। নভেম্বরে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। একটি সংস্থার কর্মীরা আলোর ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে জানিয়েছে, মেরামতির জন্য কয়েক লক্ষ টাকার খরচ। তার পর থেকেই পর্যটন দফতর চুপ করে রয়েছে।” রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায় যে কেন্দ্রের বিধায়ক, সেখানে কেন এই অব্যবস্থা বজায় থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ। শ্যামবাবু অবশ্য বলেছেন, “পর্যটন দফতরকে আলো মেরামতির জন্য বলা হয়েছে।”
|
আঁধারে ডুবে শ্যামরাই মন্দির। শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি। |
পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ সম্প্রতি বিষ্ণুপুরে এলে তাঁকে সব জানায় মহকুমা প্রশাসন। মন্ত্রীর আশ্বাস ছিল, “শীঘ্রই আলোর ব্যবস্থা হবে।” দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পৃথা সরকারের আশ্বাস, “মেলা শুরুর আগেই আলো জ্বালানো হবে।” আজ, শুক্রবার থেকে ‘বিষ্ণুপুর মেলা’ শুরু হচ্ছে। আর ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে পর্যটন দফতরের ‘বিষ্ণুপুর উৎসব’। আলোর ব্যবস্থা এখনও হয়নি। অথচ রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের এই সমস্যার কথা জানেনই না বাঁকুড়ার জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি। তাঁর মন্তব্য “খোঁজ নিয়ে দেখব।”
মেলা ও উৎসব উপলক্ষে দলে দলে পর্যটকেরা ভিড় করছেন এই ‘মন্দির-নগরী’তে। ২০০৮ সালে ‘বিষ্ণুপুর উৎসব’ শুরুর আগে রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগে রাসমঞ্চ, শ্যামরাই ও জোড়বাংলা মন্দিরকে রাতে আলোকিত করার জন্য ‘ডায়নামিক সিস্টেম লাইট’ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। মায়াবি আলোয় মন্দির দেখার আকর্ষণে অনেক পর্যটক সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। বিষ্ণুপুরের ট্যুরিস্ট গাইড অচিন্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “বিষ্ণুপুরের সেরা তিন স্থাপত্য কীর্তি রাতের আলোয় দেখার জন্য অনেকেই হোটেল-লজে থেকে যেতেন। আলো জ্বলছে না শুনে অনেক পর্যটক থাকতে চাইছেন না।” কলকাতার পর্যটক দম্পতি সুবিকাশ ও যূথিকা রায় বলেন, “এসে থেকে শুনছি আলো বন্ধ। মনটা খারাপ হয়ে গেল।” |