এ বার শীতে পর্যটনের পুরনো ছন্দ ফিরছে ঝাড়গ্রামে। এক সময় এই অরণ্য-শহরের অন্যতম প্রধান শিল্প ছিল পর্যটন। কিন্তু রাজনৈতিক অশান্তির জেরে ঝাড়গ্রাম থেকে মুখ ফেরাচ্ছিলেন পর্যটকেরা। এ বার সে ছবিতে ‘পরিবর্তন’।
স্থানীয় লজ-হোটেলগুলির দাবি, বড়দিন-বর্ষশেষ এবং নতুন বছরের গোড়ার দিকের জন্য ইতিমধ্যেই ভাল ‘বুকিং’ হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া আর জঙ্গল-প্রকৃতির টানে গত কয়েক দশকে বাঙালির কাছে ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছিল ‘অরণ্য-সুন্দরী’ ঝাড়গ্রাম। কিন্তু ২০০৪-এ এলাকায় মাওবাদী তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকেই ‘তাল কাটতে’ শুরু করেছিল। ওই বছরের ডিসেম্বরে বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দু’টি বনবাংলো ধ্বংস করে দেয় মাওবাদীরা। তখন থেকেই পর্যটকদের সংখ্যা কমতে শুরু করে। আর ২০০৮-এ লালগড়কে কেন্দ্র করে জনগণের কমিটির অবরোধ-আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে এবং মাওবাদীদের লাগাতার খুন-সন্ত্রাসের জেরে গত তিন বছর পর্যটকেরা কার্যত এড়িয়েই গিয়েছেন ঝাড়গ্রামকে। এখানকার বেশ কয়েকটি অতিথিশালা ও হোটেলের ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে এই সময়ে। ঝাড়গ্রাম পুরসভার ‘বনানী’ অতিথিনিবাসটি হয়ে গিয়েছে সিআরপি-র ক্যাম্প। এলাকায় কোনও বড় ঘটনা ঘটলে কলকাতা থেকে আসা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্যই কিছু হোটেল-লজ চলেছে। না হলে ফাঁকাই পড়ে থেকেছে অতিথিনিবাসগুলি। কিন্তু এ বারের শীত ফের হাসি ফোটাচ্ছে পর্যটন-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের মুখে। |
আগামী ১০-১২ জানুয়ারি আবার রাজ্য যুবকল্যাণ দফতরের আয়োজনে তিন দিনের ‘জঙ্গলমহল উৎসব’ হচ্ছে এ শহরে। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় উৎসবের আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই।
কী ভাবে এল ‘পরিবর্তন’? এলাকার হোটেল এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, রাজ্যে নতুন সরকারের ক্ষমতায় আসা এবং এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানের তীব্রতা বৃদ্ধিপর্যটকদের আস্থা ফেরানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। মাওবাদীরা এলাকায় প্রায় নিয়মিত বন্ধ ডাকার যে ‘রীতি’ চালু করেছিল, অর্থনৈতিক ক্ষতিতে বিরক্ত এলাকাবাসী ইদানীং তাতে সাড়া দেওয়াও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। তা ছাড়া, গত ২৪ নভেম্বর জামবনির বুড়িশোলের জঙ্গলে মাওবাদী শীর্ষ-নেতা কিষেণজি নিহত হওয়ার পরে জনতার মধ্যে ‘শঙ্কা’র মাত্রা অনেক কমেছে। পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহের কথায়, “ঝাড়গ্রামে আগে নিরাপত্তার অভাবজনিত যে সমস্যা ছিল, তা এখন নেই। এটাই পরিবর্তন।” |