পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও মঙ্গলকোটে খেঁড়ুয়া গ্রামে বাবার শ্রাদ্ধে যেতে পারলেন ঘরছাড়া সিপিএম নেতা অশোক ঘোষ। যদিও বৃহস্পতিবার শ্রাদ্ধের সময়ে পাড়াপড়শির মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাও হাজির ছিলেন। আজ, শুক্রবার নিয়মভঙ্গের অনুষ্ঠানে তাঁরা অতিথি আপ্যায়ন এবং পরিবেশনও করবেন বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলকোট থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে খেঁড়ুয়া গ্রামের তৃণমূল নেতাদের থানায় ডেকেছিলেন ওসি দীপঙ্কর সরকার। বাবার শ্রাদ্ধের সময় অশোকবাবু যাতে গ্রামের বাড়িতে হাজির থেকে তাঁর বাবার পারলৌকিক কাজ করতে পারেন, সে জন্য তৃণমূল নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ওসির কাছে তৃণমূল নেতারা সাফ জানিয়ে দেন, সিপিএম আমলে ওই নেতা গ্রামে চরম অত্যাচার করেছেন। সাধারণ মানুষ ওঁর প্রতি ক্ষুব্ধ। ওঁকে গ্রামে ঢোকানো হলে অশান্তি বাড়বে।
গত ৮ ডিসেম্বর খেঁড়ুয়া গ্রামে মারা যান অশোকবাবুর বাবা কাঙালিচরণ ঘোষ (৮৯)। কাটোয়া শহরে তাঁকে দাহ করা হয়। অশোকবাবুই মুখাগ্নি করেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় ১৩ মাস গ্রামছাড়া অশোকবাবু গ্রামে ঢুকলে শুরু হয়ে যায় বোমাবাজি। ওই দিনই থানায় কয়েক জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তৃণমূলের জন্য তিনি বাবার পারলৌকিক কাজে অংশ নিতে পারবেন না, এই আশঙ্কা করেই তিনি প্রশাসন ও পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার অশোকবাবু বলেন, “প্রশাসন আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল না। ফলে বাবার পারলৌকিক কাজ করতে পারলাম না।”
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সর বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল প্রশাসন কতটা পক্ষপাতদুষ্ট।” মঙ্গলকোট ব্লকের তৃণমূল কোর কমিটির সদস্য অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য বলেন, “উনি রাজনীতি করবেন বলেই গ্রামে ঢোকেননি। মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্কর সরকারেরও প্রশ্ন, “উনি গ্রামে ঢুকতে না চাইলে আমরা কী করতে পারি?”
বাবার শ্রাদ্ধে অশোকবাবু হাজির না থাকলেও ছিলেন তাঁর ছয় ভাইবোন। আসানসোল, নানুর, কেতুগ্রাম থেকে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনেরাও শ্রাদ্ধের সময় ওই বাড়িতে হাজির হয়েছিলেন। অশোকবাবুর ভাই সনৎ ঘোষ বলেন, “আমাদের কেউ বিরক্ত করেনি। নিয়মভঙ্গের দিন পড়শিরা আমাদের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।” আপনার দাদা তো বাবার শ্রাদ্ধের সময় থাকতে পারলেন না? তিনি বলেন, “বাবার মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় দাদা বাড়িতে এসেছিল। সেই সময় কে বা কারা যেন বোমাবাজি করে। তার পর থেকে দাদা আর আসেননি।”
পরিবারের পাশে দাঁড়ালেও অশোকবাবুকে ঢুকতে দিচ্ছেন না কেন? তৃণমূল নেতা খেঁড়ুয়া গ্রামের দেবকুমার ধারার অভিযোগ, পূর্ণিমা মাঝি ও দিলীপ দাসের খুনের ঘটনায় ওই সিপিএম নেতার প্রত্যক্ষ মদত ছিল। এ ছাড়াও বিরোধী সমর্থকদের বাড়িতে আগুন লাগানো বা লুঠতরাজের মতো ১৯টি অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। রয়েছে ২০০৯-এ সিপিএম নেতা খুনের পরে ধান্যরুখী গ্রামে যাওয়া কংগ্রেস বিধায়কদের তাড়া করার অভিযোগও। দেবকুমারবাবুর কথায়, “গ্রামের সবার সামনে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে কান ধরে ওঠবোস করিয়েছিলেন অশোকবাবু। শাসক দল হিসেবে আমরা প্রশাসনের পাশে থাকতে পারি। গ্রামবাসীরা ওঁর অত্যাচার ভুলবেন কী করে?” তিনি আরও জানিয়েছেন, শুক্রবার নিয়মভঙ্গের দিন তৃণমূল কর্মীরাই ওই বাড়িতে পরিবেশন থেকে আপ্যায়ণ, সমস্ত কাজে সহযোগিতা করবেন।
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক বিকাশ চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল কে! মানুষ চাইছে না বলেই ‘অত্যাচারী’ অশোক ঘোষ গ্রামে ঢুকতে পারছেন না।” দুর্যোধনবাবুর অবশ্য অভিযোগ, “স্রেফ সিপিএম করার অপরাধেই তৃণমূল এ রকম অমানবিক আচরণ করল।” |