বইয়ের দোকানে দোকানে গিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি না করার আর্জি জানালেন জয়েন্ট ফোরাম ফর বুক ট্রেডার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রির সদস্যেরা। দুপুরে বর্ধমান শহরে বের করা হল মিছিলও।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই সরাসরি স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থেকে লাগাতার ধর্মঘটে নামছে পাঠ্যপুস্তক নির্মাণ, প্রকাশ ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত সব সংগঠন। তা সফল করতেই নবগঠিত এই ফোরাম বৃহস্পতিবার থেকে বর্ধমানে প্রচারে নামে। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা মিছিল করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আঞ্চলিক দফতরে গিয়ে বিক্ষোভও দেখান।
এ দিন ফোরামের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা একটি ‘খোলা চিঠি’ও বিতরণ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ৩০টি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ১১টি সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় জেলা প্রশাসন মারফত বিনা পয়সায় ছাত্রছাত্রীদের বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই বইগুলি মধ্যশিক্ষা পর্ষদই প্রকাশ করে। ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বই-ই সরকার নিডে ছাপিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেবে বলে জানানো হয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দেওয়া ‘ধোঁকা’ ছাড়া কিছু নয় বলে চিঠিতে মন্তব্য করা হয়েছে। |
চিঠিতে উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছে, পর্ষদ প্রকাশিত ষষ্ঠ শ্রেণির ৪টি বইয়ের দাম যেখানে ছিল মাত্র ৭৫ টাকা, সেগুলির কোনও পরিবর্তন বা পরিমার্জন না করেই ২০১২ শিক্ষাবর্ষে সমসংখ্যক বইয়ের দাম করা হচ্ছে ১৭৪ টাকা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট ২৫০ টাকা থেকে তা কেটে নেওয়া হবে। আগের বছরগুলিতে ছাত্রছাত্রীরা যে ওই টাকায় অতিরিক্ত যে ৭-৮টি বই কিনতে পারত, তা পারবে না।
বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভার সংযুক্ত সম্পাদক অসীম পাইনের অভিযোগ, “এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। প্রায় ৪৫ হাজার পুস্তক বিক্রেতার কাছে কমবেশি ৫ কোটি টাকার পর্ষদের বই পড়ে রয়েছে। এই বইগুলির কী হবে, সে ব্যাপারেও রাজ্য সরকার নীরব।” কী করে বিক্রেতাদের গুদামে পাঠ্যবই জমল? ফোরামের সদস্য মৃন্ময় মিত্র বলেন, “পুস্তক বিক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম টাকা জমা নিয়েও ২০১১-র শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় ছ’মাস পরেও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সহায়ক পাঠ ও গণিত-সহ অনেকগুলি পাঠ্যবই সরবরাহ করতে পারেনি। কিছু বই সরবরাহ করেছিল ২-৩ মাস পরে। এই কারণেই কয়েক কোটি টাকার সরকারি বই আমাদের কাছে পড়ে রয়েছে।”
ফোরামের অপর সদস্য অসীম সাহা বলেন, “আগে সরকার সর্বশিক্ষার টাকা সরাসরি স্কুলে পাঠিয়ে দিত। সেই টাকা স্কুলগুলি দিত ছাত্রদের। ছাত্রেরা সেই টাকায় পুস্তক বিক্রেতাদের কাছ থেকে বই কিনত। সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় পুস্তক বিক্রেতারা যেমন বাঁচতেন, তেমনই বই ছাপা ও বাঁধাইয়ের সঙ্গে জড়িত মানুষেরাও। সরকারি সিদ্ধান্তে সরাসরি স্কুলে বই পৌঁছে গেলে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষের রুজি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।” ধর্মঘট সফল করার ক্ষেত্রে বই বিক্রেতাদের তরফে ভাল সাড়া মিলছে বলেও তাঁরা দাবি করেন। |