সম্মেলন-পর্বে ফের জেলা সফরে বেরোচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আগামী ১৮ ডিসেম্বর কৃষ্ণনগরের কারবালা ময়দানে সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা তাঁর। নদিয়া দিয়ে শুরু করে এই মাসেই বর্ধমান জেলা সম্মেলনের সমাবেশে বক্তৃতা করতে দুর্গাপুর যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। পরবর্তী কালে আরও কয়েকটি জেলা সম্মেলনেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে হাজির করানোর সূচি তৈরি হচ্ছে।
দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে সিপিএমের জেলা সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। জেলার সম্মেলন-পর্ব চলবে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। তার পরে ১৫ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বসবে রাজ্য সম্মেলনের আসর। জেলা সম্মেলনের আগে বৃহস্পতিবারই ছিল রাজ্য কমিটির শেষ বৈঠক। আলিমুদ্দিনে ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ হবে। ব্রিগেডেও অন্যতম বক্তা হিসাবে থাকবেন বুদ্ধবাবু। রাজ্যে দল হেরে যাওয়ার পরেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীই যে জনসমক্ষে সিপিএমের ‘প্রধান মুখ’, এই কর্মসূচি তারই ইঙ্গিত বহন করছে বলে আলিমুদ্দিন সূত্রের ব্যাখ্যা। |
রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ দিন বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা লোকাল ও জোনাল কমিটির সম্মেলন প্রক্রিয়ার বিষয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলির মতো কিছু জেলায় সম্মেলন প্রক্রিয়ার মধ্যেও দলের কর্মীদের যে ‘রাজনৈতিক আক্রমণে’র মুখে পড়তে হয়েছে, তা-ও উঠে এসেছে আলোচনায়। জবাবি ভাষণে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, রাজ্য কমিটির বেঁধে দেওয়া রূপরেখা মেনেই ‘ঐক্যবদ্ধ পরিবেশে’ এবং ‘আত্মসমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ থেকেই সম্মেলনের আলোচনা চলছে। বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু লোকাল স্তরের সম্মেলন যে ভণ্ডুল হয়েছে, কোথাও বিবাদ গড়িয়েছে হাতাহাতি পর্যন্ত, নতুন প্যানেল তৈরি নিয়ে তরজা উচ্চতর কমিটির কাছে পৌঁছেছে এ সবই বিমানবাবু ‘ব্যতিক্রম’ বলে উল্লেখ করেছেন বলেই সিপিএম সূত্রের খবর।
লোকাল কমিটির মতো নিচু তলার সম্মেলনের ঘটনাপ্রবাহে কোনও সময়েই রাজ্য নেতৃত্বের পূর্ণ ‘নিয়ন্ত্রণ’ থাকে না। কিন্তু দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে যেখানে রাজনৈতিক আলোচনায় বেশি নজর দেওয়ার কথা, সেখানেও কমিটির সদস্য হওয়া নিয়ে উত্তপ্ত কাজিয়া কেন এত বেশি হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে দলের অন্দরেই। রাজ্য সম্পাদক গোটা ঘটনাপ্রবাহকে ‘ব্যতিক্রম’ বলে উল্লেখ করায় দলের একাংশেরই প্রশ্ন, তা হলে কি ‘বাস্তবে’র প্রতি এখনও চোখ বুজেই আছে আলিমুদ্দিন? প্রসঙ্গত, বিমানবাবুই সম্মেলন সংক্রান্ত একটি পুস্তিকায় লিখেছেন, আত্মসমালোচনা হবে ঠিকই। কিন্তু সম্মেলনের নামে দল ‘বিতর্ক-সভা’য় পরিণত হতে পারে না এবং নিজেদের কাজের কথা না-বলে শুধু অন্যের সমালোচনাও চলতে পারে না।
লোকাল স্তরে ১৩ এবং জোনালে ১৭ জনের মধ্যে কমিটি সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। বিমানবাবু এ দিনের বৈঠকে বলেছেন, জেলা কমিটির সদস্যসংখ্যা যেন ৭০ জনের বেশি না-হয়। বেশি ‘নেতা’ এখন দলের দরকার নেই! কাউকে ‘খুশি’ করার জন্য কমিটিতে রাখারও প্রয়োজন নেই। জেলা সম্মেলনে যা গোষ্ঠী-কোন্দলের ছায়া না-পড়ে, তার জন্যই বিমানবাবু ‘মরিয়া আহ্বান’ জানিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের অভিমত। |