অর্থাভাবে এর আগে বিপিএল-এর চাল কিনতে পারেনি রাজ্য সরকার। এ বার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও একই কারণে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহের কাজ শুরুই করতে পারল না খাদ্য দফতর।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, টাকা ছিল না বলে বেনফেড, কনফেড, ইসিএসসি-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলি গ্রামে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার কাজ শুরুই করতে পারেনি। সম্প্রতি ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। সেই টাকা দিয়ে ধান কেনার কাজ
শুরু হবে।
এ বার খাদ্য দফতরের ঘোষিত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জেলাশাসকদের ৩০ লক্ষ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করতে বলা হবে। কিন্তু মরসুমের প্রায় এক মাস কেটে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। খাদ্য দফতরের এক মুখপাত্র জানান, ১৫ নভেম্বর থেকে ধান কেনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। টাকার অভাবে সেই কাজ শুরু করা যায়নি। এখন প্রায় এক মাস পিছিয়ে কাজ শুরু করে তা কতটা এগোবে, বলা মুশকিল। নভেম্বর থেকে খাদ্য দফতর অবশ্য মিল মালিকদের থেকে চাল সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে। খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, চাল কলগুলি থেকে লেভি বাবদ ৬৪ হাজার মেট্রিক টনের কিছু বেশি চাল সংগ্রহ হয়েছে। তবে কলের মালিকেরা এখনও সরকারের কাছ থেকে চালের দাম পাননি।
এ দিকে, সরকার না কেনায় চাষিরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, “রাজ্যের ৬০ হাজার গ্রামে গিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার মতো পরিকাঠামো খাদ্য দফতরের নেই। তাই সরকারের হয়ে চালকলগুলি চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনছে। সমস্যা হল, কল মালিকেরা গ্রামে গিয়ে ধান কিনতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, সরকার তাঁদের পরিবহণ খরচ দেবে না। তাই আগ্রহী চাষিদের চালকলে এসে ধান বিক্রি করতে হবে।” খাদ্যমন্ত্রী জানান, সমস্যা সমাধানে প্রতিটি চালকলকে তার এলাকায় তিন দিন করে অন্তত দু’টি ক্যাম্প করে ধান কিনতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্লক অফিসেও ধান কেনার ব্যবস্থা হয়েছে।
সাধারণ নিয়মে বেনফেড, কনফেড, ইসিএসসি-র মতো সংস্থার মাধ্যমে খাদ্য দফতর গ্রামে গ্রামে গিয়ে
ধান সংগ্রহ করে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁরা গ্রামে গিয়ে ধান কেনার কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। খাদ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, আপাতত যে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা দিয়ে বড় জোর ২-৩ সপ্তাহ কাজ হবে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যখন চাহিদা বাড়বে, তখন পর্যাপ্ত টাকা না পাওয়া গেলে ধান সংগ্রহের কাজ ফের বন্ধ হয়ে যাবে। খাদ্যমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, ধান সংগ্রহের জন্য এক লপ্তে প্রচুর টাকা বরাদ্দের দরকার নেই। কারণ, সরকারের হেফাজতে চাল এলেই টাকা উঠে আসবে। সেই টাকায় আবার নতুন ধান কেনা যাবে।
এ দিকে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী এ দিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করে জানান, টাকার অভাবে রাজ্য সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করতে না পারায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। প্রণববাবু সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী কে ভি টমাসকে ডেকে রাজ্যের চাষিদের সমস্যার কথা জানান।
টমাস বলেন, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পশ্চিমবঙ্গ থেকে খাদ্যশস্য কেনার জন্য তিনি নাফেড-কে নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিকে অন্নর্পূণা যোজনার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ আজ কেন্দ্রের কাছে জমা দিয়েছে রাজ্য। এই সার্টিফিকেট ছাড়া কেন্দ্র চাল দেবে না বলে জানিয়েছিল। |