চলো যাই পিকনিকে
শীতের মরশুম আমাদের অনেকগুলো সুযোগ এনে দেয়। তাদের একটা হল পিকনিক। পিকনিকের বাংলা মানে ‘বনভোজন’। পিকনিক বনের পাশে করতে হবে, তার কোনও মানে নেই। এমনিতেও পিকনিক এখন বনে না করাই শ্রেয়। কারণ পিকনিকে গিয়ে যত্রতত্র আমরা হাজার আবর্জনা ফেলে আসি। সেটা কোথাওই ঠিক নয়, বনে তো নয়ই।
পিকনিকের শুরুটাতে আমরা সবাই মিলে নিজেদের চাঁদা দিই। তার পরে সেই টাকা একসঙ্গে করে নিজেরা বের হই বাজার করতে। সেটা একটা উদ্দীপনা হতে পারে। নিজেদের হাতে চাল-ডাল-মাছ-মাংস কিনে পিকনিকে স্পটে পৌঁছনোটাও স্মরণীয় ঘটনা। তার পরে অপটু হাতে নিজেরাই সেই খাবার তৈরি করে একসঙ্গে বসে খাওয়া, সেটাও দারুণ রোমাঞ্চকর। কিন্তু এই কাজটা করতে গিয়ে অনেক কিছু হারাতে হয় তোমাদের। যেমন, পিকনিক স্পটে নিজেদের মধ্যে খেলা, অথবা জায়গাটাকে ভাল করে ঘুরে দেখা। কারণ, এই রান্নার কাজে যদি তোমাদের বড়দের কারও সাহায্য নিতে হয়, তা হলেও এই কাজটার তদারকিতে রয়ে যেতে হয় তোমাদেরই কয়েক জনকে। খাবার পরিবেশনটাও সকলে মিলে করতে হয়। তাতেও সময় আর মনোযোগ নষ্ট। তোমাদের কয়েক জন বন্ধু এই কাজটাতে আটকে থাকবে, আর তোমরা বাকিরা মিলে খেলা করবে, তা তো হয় না! পিকনিকে তো সকলে এক সঙ্গেই এসেছ।
তার চেয়ে বরং নিজেদের ঘাড়ে রান্না করার ঝক্কিটা নিয়ো না। নিজেরা চাঁদা সংগ্রহ করে বাজারে যাও। সেখানে কিনে নাও তৈরি খাবার। জলখাবার থেকে লাঞ্চ, সমস্ত কিছু। কারণ, তোমরা যাচ্ছ আনন্দ করতে। সেখানে খাবার চিন্তা নিয়ে সময় নষ্ট কেন? খাবারটা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার ভয়? খাবার দীর্ঘক্ষণ ধরে গরম থাকে, এমন অনেক যন্ত্রপাতি তোমাদের প্রায় সকলেরই বাড়িতে মজুত রয়েছে। সেগুলোকেই সঙ্গে নিয়ে নাও। বাড়িতে খাবারটা গরম করে তার ভেতর পুরে ফেল। তা হলেই পিকনিক স্পটে তোমরা পাবে হাতে গরম খাবার।
খাবারে রান্নার ঝামেলা যদি এড়িয়ে যেতে পারো, তা হলেই তোমাদের সামনে চলে আসছে কতগুলো খেলার সুযোগ। যদি বড় কোনও জায়গায় পিকনিকে যাও, তা হলে নিজেদের মধ্যে পার্টি করে খেলে নাও একটা ২০-২০ ক্রিকেট ম্যাচ। কিংবা ফুটবল ম্যাচ। সেটাও দারুণ জমে যাবে। খেলার শেষে খেতে বসো। মনে হবে, সত্যি যেন ইডেনেই একটা ক্রিকেট ম্যাচ শেষ করে লাঞ্চ করছ তোমরা! কিন্তু যদি জায়গাটা ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচ খেলার মতো বড় না হয়? কুছ পরোয়া নেই! নিজেদের মধ্যে এ বার খেলতে থাকো ইনডোর গেম। ক্যারমের একটা চ্যাম্পিয়নশিপ হয়ে যাক পিকনিকের মাঝে। যে জিতবে তার খেতাব হবে ‘স্পট চ্যাম্পিয়ন’।
কিংবা নিজেদের মধ্যে দু’ভাগে ভাগ হয়ে খেলতে শুরু করো অন্ত্যাক্ষরি। এক দল একটা গান গাও। অন্যদের বলো তার শেষ শব্দটা নিয়ে আর একটা গান গাইতে। সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ সিনেমায় একটা চমৎকার খেলা খেলতে দেখা গিয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, রবি ঘোষ, কাবেরী বসুদের। সেটা একটা মেমরি গেম। সেটাও খেলতে পারো। এক জন, এক বিখ্যাত মানুষের নাম করো। পাশের জন সেই নামটা বলো। সঙ্গে যোগ করো আর এক জন বিখ্যাত মানুষের নাম। শেষে যে থাকবে, তাকে বলতে হবে আগে বলা সব ক’টা নাম। তার স্মৃতিশক্তি কতটা, সেটার প্রমাণ হয়ে যাবে এই খেলায়। নিজেদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে নেওয়ার এটাও একটা দারুণ সুযোগ।
যদি তোমাদের সামনে কোথাও যাওয়ার সুযোগ না থাকে, হাতে ছুটিও না থাকে, তা হলেও তুমি যেতে পারো ‘পিকনিকে’। কী করে? বন্ধুরা মিলে বাড়ি থেকে তৈরি করিয়ে আনো স্যান্ডউইচ, নুডলস, লুচি-আলুরদম, ঘুগনি, যে যেমন পারো। বন্ধুরা মিলে গোল হয়ে বসো। সকলের মধ্যে খাবার ভাগ করে দাও। খেতে খেতে গল্প করো। পারলে একটা গান চালিয়ে দাও।
দেখো, অমনি দিব্যি ব্যাপারটা একটা পিকনিক-পিকনিক লাগছে!

পিকনিকের সাতকাহন
‘পিকনিক’ শব্দটি কী থেকে এসেছে, বলা কঠিন। অনেকে মনে করেন, ‘পিকার’ ক্রিয়াপদ (বেছে নেওয়া) থেকে এসেছে প্রথম অংশ ‘পিক’, আর এর সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হয়েছে শেষের অংশ ‘নিক’ (খুচখাচ জিনিস)। তা হলে, পুরো শব্দটার মানে দাঁড়াল খুচখাচ জিনিস জড়ো করা। পিকনিক তো সেটাই। যে যা সঙ্গে করে নিয়ে যায়, সেগুলো জড়ো করে হইহই করা। তবে সত্যিই এ ভাবে ‘পিকনিক’ শব্দটি এসেছে কি না, কেউ জানে না। ছাপার অক্ষরে ‘পিকনিক’-কে প্রথম দেখতে পাওয়া যায় ফ্রান্সে টোনি উইলিস-এর ‘অরিজিনেস দে লা ল্যাঙ্গু ফ্রাঙ্কাইজে’-তে (১৬৯২ সালের সংস্করণ)। ‘পিকনিক’ বলতে বোঝানো হত এক দল মানুষকে, যাঁরা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় নিজেরাই ওয়াইন সঙ্গে নিয়ে আসতেন। ইংল্যান্ডে ১৭৪৮ সালে লর্ড চেস্টারফিল্ড একটি চিঠিতে প্রথম ‘পিকনিক’-কে ব্যবহার করেন তাস খেলা আর মদ্যপানের সঙ্গে গল্পগুজব বোঝাতে। ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে পৌঁছতে পিকনিকের সময় লেগেছিল প্রায় ৫৬ বছর।

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.