শুধুমাত্র কোচবিহার সদর মহকুমায় জনসংখ্যার তুলনায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার বাড়তি রেশন কার্ড রয়েছে। প্রতিটি রেশন দোকানে শিবির করে ওই সমস্ত ভুয়ো কার্ড চিহ্নিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মহকুমা খাদ্য নিয়ামক। শুক্রবার প্রথম পর্যায়ে ছয়টি রেশন দোকানে শিবির করার নির্দেশও জারি হয়। কিন্তু এ দিন সকালে আচমকা ওই পরিকল্পনা বাতিল করার নির্দেশ দেন খাদ্য নিয়ামক স্বয়ং। ফলে শুরুতেই থমকে যায় ভুয়ো রেশন কার্ড খুঁজে বার করার কাজ। ওই ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই। খাদ্য নিয়ামক দফতরের কর্মী মহলেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কেন এ ভাবে একটি ভাল উদ্যোগ ভেস্তে দেওয়া হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা পরিষদের কর্তারা। যদিও কোচবিহার জেলা খাদ্য নিয়ামক মানিক সরকার বলেন, “জেলায় সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ওই কাজে গুরুত্ব দিয়েছি। ধান কেনার কাজ শেষ হলে ভুয়ো রেশন কার্ড খুঁজে বার করার অভিযান শুরু হবে। তাই মহকুমা খাদ্য নিয়ামক তাঁর নির্দেশ বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন।” কোচবিহার সদর মহকুমা খাদ্য নিয়ামক কল্যাণ ঘোষ বলেন, “ধান কেনার কাজ চলায় রেশন দোকানে শিবির করে ভুয়ো কার্ড খুঁজে বার করার পরিকল্পনা নিয়েও সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে হয়েছে। শিবির খোলার কাজে নিযুক্ত কর্মীদের ফোন করে রেশন দোকানে যেতে নিষেধ করেছি। নির্দেশ বাতিলের চিঠিও পাঠাবো।” জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী কোচবিহার সদর মহকুমার জনসংখ্যা ৭ লক্ষ ৪২ হাজারের কিছু বেশি। অথচ ওই মহকুমায় রেশন কার্ড আছে ৮ লক্ষ ৮২ হাজার। বাড়তি ভুয়ো রেশন কার্ড চিহ্নিত করার জন্য শুক্রবার থেকে টানা চার সপ্তাহ মধুপুর, পুণ্ডিবাড়ি, খাগরাবাড়ি, পাতলাখাওয়া এলাকার ৬টি দোকানে শিবির করে উপভোক্তাদের হিসেব বার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। মহকুমা খাদ্য নিয়ামক গত ২ ডিসেম্বর ওই বিষয়ে নির্দেশও জারি করেন। নিয়ম মতো কোনও উপভোক্তা রেশন দোকান থেকে টানা চার সপ্তাহ রেশনের পণ্য সংগ্রহ না-করলে তাঁর কার্ড সাময়িকভাবে বাতিলের আওতায় পড়ে। ওই কার্ড নবীকরণের জন্য উপভোক্তাকে নতুন করে আবেদন করতে হয়। তাই ভুয়ো রেশন কার্ড খুঁজে বার করা কঠিন নয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের পর থেকে জেলায় জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি হলেও ঠিক মতো তল্লাশির কাজ না-হওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের দফতর থেকে রেশন দোকানে শিবির করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিভিন্ন মহলে বাড়তি রেশন কার্ডের জটিলতা কাটার আশা তৈরি হয়। কিন্তু শুক্রবার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলে প্রশ্ন ওঠে, ডিলারদের একাংশের চাপে নাকি অন্য কোনও চাপে পড়ে খাদ্য সরবরাহ দফতরের কর্তারা সিদ্ধান্ত পাল্টালেন! কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাস বলেন, “ধান কিনবেন কল মালিকরা। সেখানে খাদ্য সরবরাহ দফরের কর্মীরা সহযোগিতা করবেন জন্য ভুয়ো কার্ড খুঁজে বার করার পরিকল্পনা স্থগিত করা ঠিক হয়নি।” |