|
|
|
|
|
মেজাজ ফেরাবে সেক্সারসাইজ |
সারা ক্ষণ ব্যথা-যন্ত্রণা, স্ট্রেস ইত্যাদি শারীরিক ও মানসিক সমস্যা? তার জেরে যৌনজীবনও স্বাভাবিক ছন্দ
হারাতে পারে। ভালবাসার দুনিয়ায় ‘ফিট’ রাখবে বিধিসম্মত শরীরচর্চা। জানাচ্ছেন বিশ্বজিৎ তপাদার |
কথায় বলে, ‘সেক্স ইজ মোর মেন্টাল দ্যান ফিজিক্যাল’। পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ, অনুভূতি, আস্থা এবং ভালবাসা থেকে উৎপত্তি হওয়া আবেগে মনের সম্পূর্ণ অংশগ্রহণটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে তো আর শরীরকে উপেক্ষা করা চলে না। ক্রমাগত যদি মাইগ্রেন, কোমরের ব্যথা, ঘাড়ের আড়ষ্টতা, হাঁটুর যন্ত্রণা, অথবা সাধারণ বদহজম, কোষ্ঠবদ্ধতা আপনাকে ভোগায়, কিংবা ধরুন, সারা দিনের পেশাগত কাজের চাপে আপনার ব্যক্তিগত জীবন যদি হয়ে ওঠে ওষ্ঠাগত, ঘুম, বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়ার দফারফা, দুর্ভাবনায় দিন-রাত মন অস্থির, ক্লান্তি, গা-হাত-পা ব্যথার সঙ্গে শুগার, প্রেশার, থাইরয়েড, কোলেস্টেরলের ভয় যদি তাড়া করে, তখন সেক্স নিয়ে কী বলবে আপনার মন?
ফিটনেসের পরিভাষায়, ফিট থাকার প্রকৃত অর্থ সর্বাঙ্গীন ফিট থাকা। কিন্তু যদি দেখা যায়, আপনি দিন-কে-দিন এ সব থেকে নিজেকে এক প্রকার গুটিয়ে নিচ্ছেন, কোনও সাড়া দিচ্ছেন না, সব সময় একটা অনীহা বা অনিচ্ছা প্রকাশ করে চলেছেন, ছোটখাটো অজুহাতে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন, তা হলে তা আপনার শারীরিক ফিটনেসের দৈন্যদশাকেই প্রতিফলিত করবে। আর আপনার ফিটনেস আদতে কেমন, তা-ও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। ডায়াবিটিস, কিডনির অসুখ, বা বেশ কিছু স্নায়ুরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত যৌন অক্ষমতায় অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। এই সকল সমস্যার মধ্যে বেশির ভাগই আপনার জীবনশৈলীর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। |
|
জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনুন |
যৌন জীবনকে দীর্ঘায়িত করতে এবং মিলনের পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে চাইলে আপনার বর্তমান জীবনশৈলীর একটি পুনর্মূল্যায়ন করুন। প্রথমে সকাল থেকে রাত অবধি আপনার রোজকার জীবনযাত্রায় যা কিছু অস্বাভাবিক ও অস্বাস্থ্যকর মনে হবে, আপনার একান্ত বিশেষ মুহূর্তগুলির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে বুঝতে পারবেন, ধীরে ধীরে সেগুলি বদলে ফেলার চেষ্টা করুন। ঘুম, বিশ্রাম (শারীরিক ও মানসিক) ও পুষ্টিকর আহারের সঙ্গে কোনও আপস নয়। অফিসের কাজের চাপ অফিসেই সীমাবদ্ধ রাখুন। বাড়িতে বয়ে আনবেন না। তামাক, সিগারেট এবং অ্যালকোহল থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। শরীরে অতিরিক্ত মেদ বাসা বাঁধতে দেবেন না। স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত মেদ যৌন ইচ্ছায় ব্যাঘাত আনতে পারে, আলস্য ও অবসন্নতা নিয়ে আসে। যৌন-হরমোন ক্ষরণেও বাধা দেয়।
যত দূর সম্ভব তাজা এবং টাটকা খাবার খান। খুব বেশি তৈলাক্ত খাবার, কৃত্রিম খাবার, দীর্ঘ দিন ফ্রিজে রাখা বা বাসী খাবার যৌন উত্তেজনা কমিয়ে দিতে পারে।
পরস্পরকে আরও একটু সময় দিন। একে অপরের পছন্দকে মর্যাদা দিন। ব্যক্তিত্বে এবং সৌন্দর্যে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। এই ব্যাপারে প্রয়োজন হলে ছোটখাটো একটি মেক-ওভারও করে নিতে পারেন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই মুখের ও গায়ের দুর্গন্ধ থেকে সাবধান।
|
শরীরচর্চাই ভরসা |
শরীরচর্চাই একমাত্র প্রাকৃতিক উপায়, যার দ্বারা সহজেই ‘সেক্স অ্যাপিল’ বাড়িয়ে নিতে পারবেন। শারীরিক ভাবে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চাইলে শরীরচর্চা করতেই হবে। ফিটনেস বিজ্ঞানের এক জন ছাত্র হিসেবে শুধু বলব, যদি কখনও দেখা যায়, শরীরের সম্পূর্ণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলি, যেমন খিদে, হজম, ঘুম বা যৌন মিলনের জন্য সব সময় আপনাকে ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, তা হলে এই নির্ভরতা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস।
|
কী ধরনের ব্যায়াম করবেন |
প্রথমেই বলব, যৌন ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে কাউকেই ব্যায়াম করে ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’ বা ‘হি-ম্যান’ হতে হবে না। অনেক বেশি ব্যায়াম মানেই অনেক বেশি ক্ষমতা এ রকম ভাবার কোনও জায়গা নেই। প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরে অবসাদ ও ক্লান্তি ডেকে নিয়ে এসে আপনার ইচ্ছেটাই নষ্ট করে দিতে পারে। আপনার শরীরচর্চাকে কয়েকটি উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে সাজিয়ে নিন। যেমন
• শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ।
• শিরদাঁড়ার নমনীয়তা, দৃঢ়তা এবং শক্তিকে বাড়িয়ে তোলা।
• কার্যকারী মাংসপেশির অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক শক্তি বাড়িয়ে নেওয়া।
• মনের একাগ্রতা ও নিজের সক্ষমতার প্রতি আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।
|
সারা শরীরকে অক্সিজেনে ভরিয়ে তুলতে ব্রিদিং এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করুন। অক্সিজেনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে এ রকম বেশ কিছু ভাসমান নেগেটিভ আয়নকেও ব্রিদিং এক্সারসাইজের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো যায়। একমাত্র দূষণমুক্ত পরিবেশেই প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া সম্ভব, তাই ব্রিদিং-এর জন্য স্থান নির্বাচন ঠিক হওয়া চাই। বদ্ধ বা বাতানুকূল ঘরে এক্সারসাইজ করবেন না। এয়ার ক্লিন ও ব্লো-মোটর যুক্ত লোনিজার মেশিন রয়েছে এমন ঘরে অথবা খোলামেলা জায়গায় (সম্ভব হলে একটু উঁচু স্থানে) ব্রিদিং-এর অভ্যাস খুবই উপযোগী। দুই থেকে তিন বার স্বাভাবিক শ্বাস নেওয়া ছাড়ার প্রক্রিয়ার পর এক বার করে গভীর ও লম্বা শ্বাস ক্রিয়া অনুশীলন করুন। এই পদ্ধতিতে দশ থেকে পনেরো মিনিট করে সারা দিনে অন্তত দুই বার অভ্যাস করুন। শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের মাংসপেশি এবং ছাড়ার সময় পেটের মাংসপেশির ব্যবহার করুন। যদি কখনও শরীর খারাপ থাকে, অন্য সব ব্যায়ামকে সাময়িক বন্ধ রেখে শুধু ব্রিদিংটাই চালিয়ে যেতে পারেন। শিরদাঁড়ার নমনীয়তা, দৃঢ়তা এবং অভ্যন্তরীণ শক্তিকে এক সঙ্গে বাড়িয়ে তুলতে ‘যোসেফ পিলাটিস’ এক্সারসাইজের কোনও বিকল্প নেই। আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিতে এই মুহূর্তে পিলাটিস এক্সারসাইজকে ‘ন্যাচরাল ভায়াগ্রা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পিলাটিস এক্সারসাইজ কিন্তু শুধু বল নিয়ে কসরত নয় কিংবা কোনও স্লো-মোশন জিমনাস্টিক নয়। পিলাটিস শিখতে হলে সবার আগে এক জন প্রশিক্ষিত ট্রেনারের খোঁজ করুন। তিনিই আপনাকে প্রথম ধাপের পিলাটিস থেকে অ্যাডভান্স পিলাটিস ক্রমান্বয়ে শিখতে সাহায্য করবেন। বেশ কিছু যোগাসনও কিন্তু সরাসরি শিরদাঁড়ার নমনীয়তা, দৃঢ়তা ও শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়। যেমন পবনমুক্তাসন, বক্রাসন, ভুজঙ্গাসন, ধনুরাসন, ত্রিকোণাসন, সেতুবন্ধাসন, শলভাসন, নৌকাসন, ভদ্রাসন, ও কটিচক্রাসন প্রভৃতি। তবে খুব বেশি কঠিন যোগাসন করতে গিয়ে চোট-আঘাত বাড়িয়ে তুলবেন না। মনে রাখবেন, নিষ্ঠা সহকারে সহজ যোগাসন নিয়মিত অনুশীলনেও বাজিমাত হতে পারে। মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি করতে, ভারী ভারী ওজনের পরিবর্তে হালকা ওজন দিয়ে শরীরের প্রত্যেকটি কার্যকারী মাংসপেশিকে পনেরো থেকে কুড়িটা রিপিটিশন-এ তিন থেকে চারটে সেটে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যায়াম করান। এ ক্ষেত্রে জিম-এ পুলি সিস্টেমের সাহায্য নিতে পারেন।
যৌন-ক্ষমতার উন্নতি চাইলে, একাগ্রতা চাইলে আপনাকে টেনশন দূর করতেই হবে। একাগ্রতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে নিয়মিত প্রাণায়াম করুন। আর হ্যাঁ, মাঝে-মধ্যে দু’জনের সমস্ত পেশাগত কাজের থেকে ছুটি নিয়ে কাছেপিঠে ছোট্ট ভেকেশন-এর কনসেপ্টটা টেনশন ও স্ট্রেস কাটাতে খুবই উপযোগী। শরীর ও মনকে চাঙ্গা করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার আবেগকেও নতুন করে স্বমহিমায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। |
যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫ |
|
|
|
|
|