|
|
|
|
|
চা-তক বাঙালির খোশগপ্পো
কড়া ভার্সেস হালকা, অসম বনাম দার্জিলিং।
কেটলিতে চা আগুনে ঘি। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় |
|
|
রীতিমত ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান বা ইলিশ-চিংড়ির মতোই আমরা বনাম ওরা’র শিবিরে সেই কবে থেকে ভাগ হয়ে আছে অসম বাঙালি আর দার্জিলিং বাঙালি। আজ্ঞে হ্যাঁ, আমাদের আজকের গল্প সেই সব কট্টর চা-তক বাঙালিদের নিয়েই। কড়া ভার্সেস হালকা স্বাদের মেজাজের এই লড়াই চলছে, চলবে! আসুন, আমরা শুধু আগুনে আরও একটু ঘি যোগ করি। আমাদের ছোটবেলায় শ্যামপুকুর পাড়ার ভটচায্দা, প্রাণের বন্ধু মিত্তিরদার বাড়ি যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন, শুধু ভদ্রলোক কড়া অসম সিটিসি চা খেতেন ও খাওয়াতেন বলে। এখনও মনে পড়ে, কলেজ স্ট্রিটের সুবোধ ব্রাদার্সের বিখ্যাত চা-দোকানে প্যাকিং কেসে পাশাপাশি দার্জিলিং ও আসাম লেখা থাকত, হয়তো সেই চা-তক বাঙালিদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে উসকে দেওয়ার জন্যই। |
|
বিভাজনের কথা থাক। ‘মিলন’-এর কথা বলা যাক। এ রকম মিলন বাংলার সব পাড়াতেই এক জন করে আছেন, যাঁদের চায়ের দোকান ঘিরে শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির প্রবাদপ্রতিম আড্ডাগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে, চলবে। আড্ডার সঙ্গে মিলন, মিলনের সঙ্গে চা যোগাযোগটা মোক্ষম, কী বলেন? সত্যিই চা যে কত লোককে মিলিয়ে দিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। মনে আছে আগে বাঙালির বাড়িতে-বাড়িতে চায়ের নেমন্তন্নের চল ছিল? অনেকানেক মৈত্রী-মনান্তরের সাক্ষী থেকেছে এই এক পেয়ালা গরম চা। বাঙালির বিখ্যাত আড্ডাগুলোর অন্যতম উপলক্ষ এই পানীয়। উত্তরের বসন্ত কেবিন বলুন বা দক্ষিণের সুতৃপ্তি নমুনা অগণন!
সত্যজিতের সোনার কেল্লায় জটায়ুর সেই অমর ডায়লগ মনে পড়ে? উটের দুধে তৈরি চা খেয়ে লালমোহনবাবু যেখানে রীতিমত মুগ্ধ! তা, সে হচ্ছে উত্তর ভারতের মোগলসরাই স্টেশনে। আমাদের অনেকেরই ঘুম ভেঙেছে সেই দুধেল মশলা চায়ের স্বাদে। আমার মতো আর্ল গ্রে প্রেমিকদের কাছে সেটা অবশ্য দুঃস্বপ্ন বিশেষ। সূক্ষ্ম স্বাদের উল্টো পথে হাঁটা সেই ঘন চুমুক অনেকের কাছেই যদিও অমৃতসমান। আর স্বাদের এই র্যান্ডম বৈচিত্রের কারণেই আমি দেশবিদেশে যেখানেই যাই, সঙ্গে রাখি আমার প্রিয় দার্জিলিং চা। মনের মতো ফ্লেভার না পেলে যেখানে আমি চায়ের বদলে বিস্কিট খেয়েও থাকতে রাজি। |
|
অলঙ্করণ: সুমন চৌধুরী |
বিস্কিট বা বাঙালির বিস্কুটের প্রসঙ্গ যখন উঠলই, তখন থিন অ্যারারুট বা সাহেবি কুকিজের কথাই বা বাদ যায় কেন? এক কাপ চা-এ আমি তোমাকে চাই বলে কাতর বাঙালির প্লেটে তারা উঁকি মারবেই। ভেবে দেখুন, যত বার বিস্কিট নির্মাতারা তাঁদের বিস্কিটের কথা বলেছেন, জুটি বেঁধেছেন চায়ের সঙ্গেই। ভাবটা যেন, চা খেতে গিয়ে আমি, তোমায় খেয়ে ফেলেছি! তো, চা-আপন প্রাণ বাঁচা, ডুয়ার্স-দার্জিলিং-অসম-নীলগিরি বেঁচে থাক। চা-চা, বেঁচে থাক!
পরিশেষে আমার একটাই আক্ষেপ, বাঙালি চাইনিজ যত ভালবেসেছে, চাইনিজ টি তার বিন্দুমাত্র নয়। চিন-রসনা-রসিক হিসেবে এটা আমার সেম সাইড গোল-ও বলতে পারেন! |
|
|
|
|
|