লাইসেন্স বাতিল করে রোগী স্থানান্তরের নির্দেশে বিভ্রান্তি
ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করে দিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ফলে ওই হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে গেল। শুধু তা-ই নয়, যাঁরা ভর্তি রয়েছেন, তাঁদেরও অবিলম্বে অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে সল্টলেক এবং মুকুন্দপুরে আমরির যে হাসপাতাল রয়েছে, তার লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে না।
ঢাকুরিয়া আমরির মেন ব্লকে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত ২৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের অন্তত ১০ জন গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের কী ভাবে সরানো যাবে, স্বজনেরা তা ভেবে পাচ্ছেন না।
ঢাকুরিয়া আমরিতে যা ঘটেছে, তা ‘ক্রিমিন্যাল অফেন্স’ এবং এর শাস্তিস্বরূপ ওই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে বলে শুক্রবার দুপুরেই এসএসকেএমে দাঁড়িয়ে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই এ বিষয়ে দ্রুত কাগজপত্র তৈরির নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র। বিকেলের মধ্যে ঢাকুরিয়া আমরিতে একটি নোটিস ঝুলিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে লাইসেন্স বাতিলের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
নোটিসের বক্তব্য: রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক ও দফতরের এক উপ-অধিকর্তা এ দিন সকালে ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। তাঁদের মনে হয়েছে, সেখানে রোগী ও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ক্ষেত্রে ‘যথেষ্ট বিপদ’ রয়েছে। নোটিসে লেখা হয়েছে, ‘১৫, পঞ্চাননতলা রোডের হাসপাতালটির দু’টো ভবনেই স্বাস্থ্য-পরিষেবা প্রদান, ও কোনও যন্ত্র ব্যবহার বন্ধ করা হল। পরবর্তী নোটিস জারি হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনও রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা বা ভর্তি করে চিকিৎসা করা চলবে না। যাঁরা ভর্তি রয়েছেন, আত্মীয়ের সম্মতিক্রমে তাঁদের অন্যত্র সরাতে হবে।’
অগ্নিদগ্ধ। ঢাকুরিয়া আমরিতে। ছবি: রাজীব বসু
রাজ্যের সহকারী স্বাস্থ্য-অধিকর্তা (প্রশাসন) বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ দিন বলেন, ঢাকুরিয়া আমরির কোনও বাড়িতেই যাতে কোনও রকম চিকিৎসা না-হয়, লেক থানার অফিসার-ইন-চার্জকেও তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বরঞ্জনবাবু জানান, ১৫ নম্বর পঞ্চাননতলা রোড ঠিকানায় আমরির যে দু’টো ভবন রয়েছে, ২০১০-এর ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্টের ২১ (১ডি) এবং ২৪ (৪) ধারা মোতাবেক সেখানে রোগী ভর্তি ও রোগীর চিকিৎসা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা পুরসভাকে বলেছি, সব রোগী বেরিয়ে গেলে হাসপাতালে যেন তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।” যদিও এএমআরআইয়ের তরফে সত্যব্রত উপাধ্যায় রাতে জানান, তাঁরা এমন কোনও নির্দেশ পাননি। তাই পুরনো বাড়িতে যথারীতি ২৫ জনের চিকিৎসা চলছে।
এ দিকে লাইসেন্স বাতিলের প্রেক্ষিতে রোগী স্থানান্তর নিয়ে স্বভাবতই পরিজনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, গুরুতর অসুস্থদের কী ভাবে আইসিইউ থেকে বার করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে? স্বাস্থ্য-কর্তাদের কী বক্তব্য?
বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে ভেন্টিলেশন, অক্সিজেন, সব থাকে। গুরুতর অসুস্থদের সরানোয় অসুবিধা নেই।” কিন্তু সরাতে গিয়ে পথে কারও মৃত্যু হলে দায় কে নেবে? স্বাস্থ্য-কর্তাদের ব্যাখ্যা, “সেই সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সে যে মেডিক্যাল অফিসার থাকবেন, দায় তাঁকে নিতে হবে।”
এতে অবশ্য রোগীর আত্মীয়েরা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। যেমন মৃদুলা গুহঠাকুরতার বাড়ির লোকজন বুঝে উঠতে পারছেন না, তাঁরা কী করবেন। ঢাকুরিয়া এএমআরআইয়ের নতুন ভবনে ভর্তি ছিলেন মৃদুলাদেবী। আগুন লাগার পরে তিনি নিজেই মোবাইলে আত্মীয়দের খবর দিয়েছিলেন। ভোর রাতে তাঁরা এসে মৃদুলাদেবীকে উদ্ধার করে আমরি-র মেন ব্লকে ভর্তি করেন। অসুস্থ শরীরে এই ধকল এবং প্রবল মানসিক চাপে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃদুলাদেবী এখন আইসিইউয়ে। সেখান থেকে আবার সরাতে গেলে তাঁর প্রাণসংশয় হবে বলে পরিজনেরা আশঙ্কায়।
লাইসেন্স বাতিলের জেরে ওঁদের মতো অনেকেই পড়েছেন অকূল-পাথারে।

পাঁচ সওয়াল
• কোথায় প্রথমে আগুন
বেসমেন্টের উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে আগুন লাগে। ছিল দাহ্য বস্তু।

• কী ধরনের দাহ্য ছিল
কাঠের বাক্স, এলপিজি সিলিন্ডার, পিভিসি কেব্ল, পরিত্যক্ত গদি-সহ নানা দাহ্য বস্তু।

• কী ভাবে ছড়াল ধোঁয়া
এসি-র ডাক্ট দিয়ে কালো, বিষাক্ত ধোঁয়া প্রতিটি তলায় ছড়িয়ে পড়ে।

• ধোঁয়া বাইরে বেরোল না কেন
হাসপাতালে কাচের জানলা খোলার ব্যবস্থাই নেই। ফলে ধোঁয়া বেরোতে পারেনি।

• হাসপাতালে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিল কি
বন্ধ ছিল স্মোক অ্যালার্ম। কাজ করেনি জল ছেটানোর যন্ত্র। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ব্যবহারের প্রশিক্ষিত কর্মী নেই।

সূত্র: পুলিশ, দমকল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.