মাস তিনেক আগে ‘রিফিল’ করতে পাঠানো হয়েছে দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখার আগুন নেভানোর সিলিন্ডারগুলিকে। তার পরে আর সেগুলির খোঁজই রাখেননি কর্তৃপক্ষ। হাতে গোনা যে কয়েকটি সিলিন্ডার দেওয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সেগুলিরও মেয়াদ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সেগুলির আগুন নেভানোর ক্ষমতা ফুরিয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে ছোট মাপের আগুন লেগে গেলেও দমকল এসে পৌঁছানোর আগে তা নেভানো সম্ভব নয়। ততক্ষণে ছোট আগুনও ভয়াবহ আকার নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনভাবেই চলছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল। এখানেই শেষ নয়। হাসপাতালের আইসিইউর সামনেই রয়েছে একটি বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ড। যেই বোর্ডের মাধ্যমে আইসিইউ বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বোর্ডটি উন্মুক্ত। প্রতিদিন অসংখ্যবার সেখানে বিদ্যুতের ফুলকি গড়িয়ে পড়ে। খোদ আইসিইউ বিভাগ প্যানেল বোর্ড থেকে অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা করে পর পর চারটি চিঠি পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। অথচ কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। নির্দেশ অনুযায়ী সদর হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের দেওয়ালে আগুন নেভানোর সিলিন্ডার রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সিলিন্ডারগুলিতে থাকা রাসায়নিক একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ফের ভরতে হয়। না-হলে রাসায়নিকের আগুন নেভানোর ক্ষমতা হারিয়ে যায়। সেই নিয়ম মেনেই জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সিলিন্ডারগুলিতে রাসায়নিক ভরানোর জন্য পাঠানো হয়েছে। তার পরে কর্তৃপক্ষের তরফে আর কোনও খোঁজ রাখা হয়নি বলে অভিযোগ। |
হাসপাতালের নথি অনুযায়ী, মাস তিনেক আগে ২০টি সিলিন্ডার রাসায়নিক ভরার জন্য পাঠানো হয়। পাঁচটি সিলিন্ডার এখনও হাসপাতালে রয়েছে। যেগুলিরও মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। অর্থাৎ তিন মাস ধরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই। হাসপাতালের কোথাও ছোট আগুন লেগে গেলেও তা নেভানোর কোনও উপায় থাকবে না বলে কর্মীরাই অভিযোগ করেছেন। এমনকী, ১৫টি বিভাগে প্রায় সাড়ে পাঁচশো রোগী থাকার তিন তলা জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে কোনও অগ্নি সর্তকতা ঘন্টাও নেই। তার ফলে হাসপাতালের কোনও অংশে আগুন লেগে গেলে তখনই বোঝার উপায় নেই। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “কয়েকটি সিলিন্ডার রিফিল করার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে বাকি যে সিলিন্ডার রয়েছে সেগুলিও রিফিল করার জন্য বলা হয়েছে।” দমকল বিভাগের উত্তরবঙ্গের উপ অধিকর্তা উদয় নারায়ন অধিকারী বলেন, “সরকারি হাসপাতালগুলিতে আগুন নিয়ে সর্তকতামুলক নির্দেশ বারবার পাঠানো হয়। আগুন যাতে না লাগে তার জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রাথমিক ভাবে আগুন নেভানোর সিলিন্ডার রাখা বাধ্যতামূলক। এছাড়া আগুন লাগার শতকরা ৯৫ শতাংশ থাকে বিদ্যুতের তার থেকে। বিদ্যুতের তারগুলি যেন সুরক্ষিত থাকে তা অবশ্যই নজর রাখতে হবে।” শুক্রবার কলকাতায় ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের দিনই জলপাইগুড়ির সরকারি হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেল শুধু আইসিইউর সামনে নয়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সামনে বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ডগুলি অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল, মহিলা বিভাগ, সাধারন বিভাগের দেওয়ালে একটি বিদ্যুতের তারের সঙ্গে অন্যটি জড়িয়ে রয়েছে। কোথাও আবার তারের মাঝামাঝি কেটে তার সঙ্গে অন্য তার জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সব তার বা জোড়াতালিগুলি কোনও রকম আবরণ ছাড়া দেওয়াল থেকে ঝুলে রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বছর তিনেক আগে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে বিদ্যুতের তারে শর্ট সার্কিটের কারণেই মাঝারি ধরনের আগুন লেগে যায়। তার পরে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি কিছুই। হাসপাতালে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ডগুলির বিষয়ে যে বিভিন্ন বিভাগ থেকে চিঠি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে তা মেনে নিয়ে সুপার বলেন, “হাসপাতালের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড নতুন হয়েছে। সেখানে বিদ্যুতের ওয়ারিং করার জন্য বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ডগুলিতে জোড়াতালি দেওয়া হয়। সেগুলি বিপজ্জনক ঠিকই। বিষয়টি আমরা জানিয়েছি।” |