উত্তরবঙ্গের ১৯টি নার্সিংহোমে অগ্নিনির্বাপক কোনও ব্যবস্থা নেই। শুক্রবার কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এমনই তথ্য উঠে এসেছে। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তালিকায় শুধু শিলিগুড়ির ৭টি নার্সিংহোম রয়েছে। বাকি ১১টি নার্সিংহোম রয়েছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহে। দমকল দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে,। নথিভুক্ত নেই অন্তত ১৫০টি ছোট মাপের নার্সিংহোম। যেগুলি পুরসভা থেকে ট্রেড লাইন্সেস নিয়ে চলছে। আগুন নেভানোর ন্যূনতম পরিকাঠামো না-থাকলেও ওই নার্সিংহোমগুলি চলছে কী ভাবে? দমকল কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ করে দিচ্ছেন না কেন? দমকলের অফিসারদের একাংশ জানান, একাধিকবার নার্সিংহোমগুলিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেও কাজের কাজ হয়নি। একশ্রেণির প্রভাবশালী নেতার মদতে ওি নার্সিংহোমগুলি বিধি বেঙে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দমকলের অফিসার-কর্মীদের অভিযোগ। তবে দমকলের অন্দরে দফতরের অফিসারদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দমকলের একাধিক অফিসারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই নার্সিংহোমগুলি ‘ছাড়’ পাচ্ছে কি না তা নিয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে। দমকলের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডিরেক্টর উদয় অধিকারী বলেন, “প্রত্যেকটি নার্সিংহোম পরিদর্শন করে আমরা তালিকা তৈরির পর নোটিশ জারি করি। ৩২টি নার্সিংহোম চিহ্নিত করা হয়েছিল যেগুলির মধ্যে কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। এদের মধ্যে ১৪টি নার্সিংহোম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করে। বাকিগুলি অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থার কাজ শুরু করেছে। শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোম কোনও কাজ শুরু করেনি। আমরা নোটিশ জারি করেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দমকলের অনুমতি ছাড়া যে সব নার্সিংহোম রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, সেগুলির তালিকাও তৈরি করা হবে।” দমকল সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় অন্তত ২০০টি নার্সিংহোম রয়েছে। যার মধ্যে শিলিগুড়িতে ৫২টি নার্সিংহোম রয়েছে। বছর খানেক আগে দমকল কর্তৃপক্ষ উত্তরবঙ্গে ৩৪টি নার্সিংহোম চিহ্নিত করে, যাদের অগ্নিনার্বাপক কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এদের মধ্যে দার্জিলিং জেলায় ১৬টি (যার মধ্যে সিংহভাগ শিলিগুড়িতে), কোচবিহারে ৮টি, জলপাইগুড়িতে ৫টি, মালদায় ৪টি এবং উত্তর দিনাজপুরে ১টি নার্সিংহোম রয়েছে। কয়েক দফায় নোটিশের পর ১৪টি নার্সিংহোম অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করে। কিন্তু বাকি নার্সিংহোমগুলির কেউই এখনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা করতে পারেনি। এমনকী শিলিগুড়ির সেবক রোড সংলগ্ন একটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ দমকলের নোটিস সত্ত্বেও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার কাজে হাত দেয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, ‘ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট’ ছাড়া নার্সিংহোম চললেও পুরসভা ও প্রশাসন কিংবা স্বাস্থ্য দফতর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? দমকলকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা-প্রশাসনের কয়েকজনের যোগাসাজশ ছাড়া ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট না-নিয়ে নার্সিংহোম চলতে পারে না। তাই সকলের ভূমিকা তদন্ত করে দেখার পক্ষে সওয়াল করেছেন ওই দমকলকর্মীরা। দমকল কর্তৃপক্ষ জানান, উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ নার্সিংহোমগুলি চার তলা থেকে পাঁচ তলা ভবন। সেই সব ভবনের ক্ষেত্রে একটি জলাধার, পাম্প, প্রত্যেকটি তলায় আউটলেক, ডিটেক্টর এবং অ্যালার্মিং ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। এক কথায় ‘অটোমেটিক ফায়ার সিস্টেম’। কোথাও আগুন লাগলে বা ধোঁয়া বেরোলে ওই পদ্ধতি থেকেই প্রথমে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ‘অ্যালার্ম’ বেজে উঠবে। পরে জলের লাইনের প্রত্যেকটি মুখ খুলে জল বের হওয়া শুরু হবে। দমকলের এক কর্তা বলেন, “সেক্ষেত্রে খুব সহজেই আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বড় ধরণের কোনও বিপর্যয় ঘটবে না।” দমকলে সূত্রে খবর, ১৯ নার্সিংহোমের কোনওটিতে আধুনিক মানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ নার্সিংহোমগুলি এমন জায়গায় তৈরি করা হয়েছে যেখানে দমকলের ইঞ্জিনও ঢুকতে পারবে না। দমকলের কর্মীরা জানান, শিলিগুড়ির উধম সিংহ সরণিতে সহ শহরের ছয়টি নার্সিংহোম রয়েছে, যেখানে আগুন লাগলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ওই নার্সিংহোমগুলিতে নিজস্ব জলাধারের ব্যবস্থা নেই, পাশাপাশি দমকলের ইঞ্জিন ঢোকার রাস্তাও রাখা হয়নি। এক আধিকারিক বলেন, “এ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন। না হলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড উত্তরবঙ্গেও ঘটতে পারে।” |