|
|
|
|
ঢাকুরিয়ার মতোই অবিবেচক সল্টলেক আমরি |
কাজল গুপ্ত • কলকাতা |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
এক পাশে মর্গ। অন্য পাশে জেনারেটর রুম। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো গ্যাস সিলিন্ডার, প্লাস্টিক আর থার্মোকল জড়ানো প্যাকেট। শুক্রবার ঢাকুরিয়া আমরি-র বেসমেন্টে আগুন লাগার কয়েক ঘণ্টা পরে এই ছবিই দেখা গেল সল্টলেক আমরি-তে।
সকাল সাড়ে দশটা। ম্যাটাডর ভর্তি করে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। যা দেখে সল্টলেক আমরি হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত লোকজনের প্রতিক্রিয়া, “ওই সব সিলিন্ডার ফের ঘুরে হাসপাতালের বেসমেন্টেই ফিরে আসবে।”
ঢাকুরিয়ার ঘটনার পরেই সল্টলেকের আমরি-কর্তৃপক্ষও বেসমেন্ট নিয়ে সতর্ক হবেন, সেটাই স্বাভাবিক ছিল। বেসমেন্টে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ আটকাতে তাই সব ক’টি গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকী, রোগীর বিশদ বৃত্তান্ত না-জেনে হাসপাতালের মূল প্রবেশপথে কাউকেই ঢুকতে দিচ্ছিলেন না নিরাপত্তারক্ষীরা। হাসপাতালের যে দিক দিয়ে মৃতদেহ বার করা হয়, দুপুরে এক বার সে দিক দিয়ে বেসমেন্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে সংবাদমাধ্যমের দিকে প্রায় তেড়ে আসেন কর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীরা।
সকালে রক্ষীদের চোখ এড়িয়ে হাসপাতালের বেসমেন্টে ঢুকে চোখে পড়েছিল এক দিকে জেনারেটর রুম। অন্য দিকে মর্গ। মধ্যে রাখা একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার। বেসমেন্টে রোগীদের পোশাকের ঘর। পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে বাঁধা থার্মোকল মোড়া প্যাকেট। এক কর্মী জানালেন, ওই সব প্যাকেটে ওষুধ, স্পিরিট, মোম-সহ হাসপাতালের নানা সামগ্রী রয়েছে। এমনকী, রক্ষণাবেক্ষণের একটি বিভাগও রয়েছে সেখানে। হাসপাতালের পিছনের অংশে রয়েছে অক্সিজেন প্লান্ট, ওয়াটার প্লান্ট, বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার, নির্মাণ-সামগ্রী। |
|
বেসমেন্টে কোথায় কী, তারই তালিকা টাঙানো রয়েছে
সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে। শুক্রবার। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
হাসপাতাল অভিযোগ মানেনি। বরং তাদের পাল্টা দাবি, সল্টলেক তো বটেই, ঢাকুরিয়ার আমরি-র বেসমেন্টে আগুন লাগার মতো কিছু ছিল না। বরং সল্টলেকের হাসপাতালে সব ধরনের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা আছে। কর্তৃপক্ষের তরফে টি এস কুকরেজা বলেন, “আমাদের এমনই ব্যবস্থা যে, আগুন লাগলেই সিলিং থেকে জল পড়বে। আমাদের হাসপাতালে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে মাঝেমধ্যেই মহড়া হয়।” যদিও কর্মীদের একাংশ জানান, তাঁরা সে সব অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র চালাতে জানেন না। বেসমেন্টেই গ্যাস সিলিন্ডার-সহ যাবতীয় সামগ্রী থাকে। অথচ গোটা বেসমেন্টের গরম হাওয়া বার করার জন্য একটি মাত্র পাখা।
পুরসভা সূত্রে খবর, সল্টলেকে যে সব হাসপাতালে বেসমেন্ট রয়েছে, সেগুলিতে গাড়ি থাকার কথা। অথচ তা ব্যবহার হচ্ছে গুদাম হিসেবে। আমরি-কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও হাসপাতালের একতলায় ডিসপ্লে বোর্ডেই লেখা আছে বেসমেন্ট কী কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
এ দিনের ঘটনার পরে সল্টলেকের আটটি হাসপাতালকে অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা জানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা। পুর-কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের বেসমেন্ট কী ভাবে ব্যবহার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান। চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “সল্টলেকের হাসপাতালগুলির অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা কী আছে, তা সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নত করতে বলা হয়েছে। তাঁরা সঠিত তথ্য পুরসভাকে দিচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখতে দমকলের কাছে আবেদন করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|