এএমআরআই হাসপাতালের মতো দুর্ঘটনা যে কোনও দিন আবার যে কোনও হাসপাতালে ঘটতে পারে! কারণ, এক বছর পার হয়ে গেলেও বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবার উপরে নজর রাখতে তৈরি নতুন ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’-এর প্রয়োগই করে উঠতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। খোদ স্বাস্থ্যসচিব থেকে শুরু করে অন্য উচ্চপদস্থ স্বাস্থ্যকর্তা, প্রত্যেকেই এই কথা কবুল করেছেন।
বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ম মেনে পরিষেবা না-দিলে ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী তার লাইসেন্স বাতিল ও জরিমানা হওয়ার কথা। বছর-বছর লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের জন্যও স্বাস্থ্যকর্তাদের হাসপাতাল পরিদর্শন করার কথা। কিন্তু তার কিছুই স্বাস্থ্য দফতর করে উঠতে পারে না। |
পুরনো আইনে শাস্তির বিধান কম ছিল বলে ২০১০-এর অক্টোবরে নতুন ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইন বিধানসভায় পাশ হয়েছিল। অথচ, তার পরে এক বছর কেটে গেলেও বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের বাধায় তার রুল বা বিধিই কার্যকর করে উঠতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। শুধু মতামত নেওয়াই চলছে। আর ফাঁক গলে যথেচ্ছাচার চালিয়ে যাচ্ছে বহু বেসরকারি হাসপাতাল। ঢাকুরিয়া আমরি-র ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, হাসপাতালে ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ অকেজো ছিল। ইমার্জেন্সি এগজিটও ছিল না। কেউ সে বিষয়ে নজর দেয়নি। স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের কথায়, “আমাদের তো হাত-পা বাঁধা। ডাক্তারদের বাধাতেই ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট চালু করতে পারা যায়নি। তার মাসুল তো গুনতেই হবে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টা নিয়ে আলোচনায় বসছি।”
স্বাস্থ্যকর্তারাই জানিয়েছেন, কোনও বেসরকারি হাসপাতালের বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদিত হলেই স্বাস্থ্য দফতর ধরে নেয় যে, সেটি দমকলের বৈধ কাগজপত্র পেয়েছে। সেগুলি আর আলাদা করে যাচাই পর্যন্ত করা হয় না। তার উপরে কোনও হাসপাতালকে লাইসেন্স দেওয়ার পরে আবার লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের মাঝখানে যে দু’-তিন বছরের ব্যবধান থাকে, তার মধ্যে কখনও হাসপাতাল পরিদর্শনে যান না স্বাস্থ্যকর্তারা। এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, “ওই সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছামতো অবৈধ নির্মাণ করতে পারেন। দমকল-বিধি লঙ্ঘনও করতে পারেন। আমাদের কিচ্ছু করার নেই।” |
স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের ব্যাপারটিও ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সুপারিশের উপরে নির্ভর করে হয়। কারণ, হাসপাতাল ঘুরে দেখার মতো লোকবলই স্বাস্থ্য দফতরের নেই। আর এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “আমরা জানি, কলকাতার পাশাপাশি জেলায় অসংখ্য ছোটবড় হাসপাতাল ও নার্সিংহোম পরিষেবা-বিধি লঙ্ঘন করে চলছে। অনেকে বিনা লাইসেন্সে চলছে। কিন্তু সেগুলি আটকানো বা ধরার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই।”
নতুন আইন কার্যকর করা না-গেলে ধরা পড়লেও কাউকে কড়া শাস্তি দিতে পারা যাবে না বলেও স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতার অন্য নামী বেসরকারি হাসপাতালগুলির কী অবস্থা?
মোমিনপুরে ‘ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিএমআরআই)-এর বেসমেন্টে যেতে চাইলে কর্তৃপক্ষ বাধা দেন। কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়, বেসমেন্টে কিছু ‘সাপোর্ট মেটিরিয়াল’ রয়েছে, যেগুলি দাহ্য নয়। কিন্তু ‘‘ওখানে যাওয়ার দরকার নেই।”
যোধপুর পার্কের শ্রী অরবিন্দ সেবা কেন্দ্র হাসপাতালের প্রশাসনিক আধিকারিক সোমশ্রী রায় বলেন, “আমাদের হাসপাতালে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম এবং আগুন নেভানোর কাজে প্রশিক্ষিত কর্মীরা রয়েছেন। সপ্তাহে এক বার করে মহড়া দেওয়া হয়। সুরক্ষার প্রশ্নে আমরা কোনও রকম খামতি না রাখারই চেষ্টা করি।”
|