|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
পথেই বিপদ |
কালীক্ষেত্রে দখলদারি |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিতে যাচ্ছিলেন বেলগাছিয়ার বাসিন্দা মিথিলেশ কুমার। স্ত্রী আর দু’বছরের মেয়েকে নিয়ে কালী টেম্পল রোড আর সদানন্দ রোডের মোড়ে এসে গাড়ির মাঝখানে পড়ে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলেন। ঠিক বুঝতে পারলেন না, কোন দিকে যাবেন। রাস্তা ছেড়ে যে ফুটপাথে উঠবেন তা-ও সম্ভব নয়। কারণ এই রাস্তায় চওড়া ফুটপাথ থাকলেও হাঁটার জায়গা বলতে কার্যত কিছু নেই। রাস্তার অর্ধেকটাও চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। শেষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে পরে কোনওক্রমে হাত দেখিয়ে রাস্তা পার হলেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড থেকে কালী টেম্পল রোড শুরু হয়েছে। এই মুখ থেকে ফুটপাথ সমেত রাস্তায় হকারদের দাপটে রীতিমতো গাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে মন্দির দর্শন করতে হচ্ছে দূরদূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য পুণ্যার্থীকে।
কালীঘাট মন্দির দর্শনের জন্য প্রতি দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষের আনাগোনা চলে। সপ্তাহের কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে আবার লক্ষ মানুষের ভিড় হয় এখানে। অথচ, ফুটপাথ সমেত রাস্তার অর্ধেক অংশ চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থানীয় মানুষ ও পুণ্যার্থীদের অভিযোগ, নিয়ম মানার কোনও বালাই নেই। মানা হয়নি পুরসভার তৈরি হকার নীতিও। ফুটপাথের দুই-তৃতীয়াংশ ছাড়ার কথা বলা হলেও এই জায়গায় চলছে ঠিক তার উল্টো কারবার। |
|
কী নেই এখানে? মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য জামাকাপড়, জুতো, শীতের পোশাক, কম্বল থেকে শুরু করে অ্যালুমিনিয়ামের বাসন, শাঁখা-পলা, শাঁখ, বিভিন্ন দেবদেবীর ছোট ছোট মূর্তি সবই মেলে। আছে ফল, চা, খাবারের দোকানও।
সমস্যার এখানেই শেষ নয়। কালীঘাট রিফিউজি হকার্স কর্নার মার্কেটের বেশ কিছু দোকান কালী টেম্পল রোডের উপর। এই মার্কেটের ব্যবসায়ী ইউনিয়নের সম্পাদক দেবু প্রামাণিকের কথায়: “মার্কেটের দোকানদারদের ছ’ফুট করে দোকান থাকলেও কয়েক জন রাস্তায় বেশ কিছু জিনিস রাখেন। ফুটপাথের হকারদের দেখাদেখি দোকানদাররা এই কাজ করেন। রাস্তার উপর জিনিসপত্র না রাখতে আমরা আমাদের সদস্যদের বলি। তবে পুলিশ যদি হকারদের দোকান নিয়ন্ত্রণ করে, আমরাও আমাদের দোকান সরিয়ে আনতে পারব।”
কালী টেম্পল রোডের ফুটপাথ-সহ রাস্তার হকারদের অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করে আইএনটিইউসি। দক্ষিণ কলকাতা আইএনটিইউসি-র সভাপতি কুমার সাহা বললেন, “এই জায়গায় হকারেরা নতুন করে বসেননি। অনেক দিন আগে থেকেই বসেন। হকার তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের সদস্যদের বলেছি যাতে পথচারীদের জন্য ফুটপাথের ৫০ শতাংশ ছেড়ে রাখা হয়। রাস্তায় যাঁরা বসেন, তাঁদের ডালা নিয়ে বসার অনুরোধ করা হয়েছে ইউনিয়নের তরফে।” স্থানীয় ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী মজুমদারের কথায়: “ওই এলাকার হকার সমস্যার কথা জানি। কিন্তু আমার পক্ষে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। আমি মেয়র এবং প্রশাসনকে অনেক বার জানিয়েছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার উপর মহল থেকে নিতে হবে।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এ ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব।” |
|
এখানেই সমস্যার শেষ নয়। এই রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। তাই প্রতি দিন সকাল-বিকেল সাইকেল, মোটরবাইক, ট্যাক্সি, স্কুলবাস থেকে শুরু করে ম্যাটাডর সবই চলে। সকাল থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত রাস্তাটি টালিগঞ্জ তথা প্রতাপাদিত্য রোড থেকে হরিশ মুখার্জি অভিমুখী থাকলেও দুপুর ২টোর পর থেকে আবার টালিগঞ্জ অভিমুখী থাকে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। যাঁরা গাড়ি এবং ট্যাক্সি নিয়ে মন্দিরে আসেন তাঁরা কালীঘাট থানা পর্যন্ত গাড়ি এনে আবার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের দিকে গাড়ি ঘোরান। আর সেখানেই সমস্যা তৈরি হয়। গাড়ি ‘ইউ টার্ন’ করার সময় পথচলতি মানুষের সমস্যা হয়। যদিও এই রাস্তায় কালীঘাট থানা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে থানা সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের সমান্তরাল সদানন্দ রোড একমুখী। প্রধান রাস্তায় গাড়ির চাপ কমাতে এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল খুবই জরুরি। তবে কালীঘাট থানার পর থেকে মন্দিরের দিকে আর গাড়ি নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। ফলে গাড়ির জন্য দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
তার উপর রাস্তার একটি দিকে কার্যত ট্যাক্সিস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে। এই স্ট্যান্ড প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যদি ওখানে কোনও ট্যাক্সিস্ট্যান্ড তৈরি হয়ে থাকে, আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে রাস্তায় হকার বসলে সেটা পুরসভার সঙ্গে স্থানীয় থানার দেখার দায়িত্ব।” যদিও পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, হকার ওঠানোর সিদ্ধান্ত পুরসভার। পুলিশ তাদের সাহায্য করতে পারে মাত্র।
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল। |
|
|
|
|
|