উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
বিটি রোড
বেপরোয়া দু’চাকা
কাল সাড়ে ১০টা। তীব্র বেগে দুই আরোহীকে মোটরবাইকে বসিয়ে ডানলপ থেকে সিঁথির মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তিন জনেরই মাথায় হেলমেট নেই। অনন্যা বাসস্টপের কাছে এক ট্রাফিককর্মী তখন পথচারীদের রাস্তা পার করাচ্ছেন। সেই লেনে দাঁড়িয়ে দু’টি ট্রাক। কিন্তু মোটরসাইকেল চালক ট্রাফিককর্মীর সিগন্যাল লক্ষ না করেই গাড়ি চালাতে থাকেন। যখন বুঝতে পারলেন, তখন ব্রেক কষেও কোনও লাভ হল না। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা ধাক্কা মারলেন ডিভাইডারে। ছিটকে পড়লেন দুই আরোহী। এক জনের মাথা ফেটে গেল। অন্য জন কোমরে চোট পেলেন। চালকের আঘাত অবশ্য গুরুতর ছিল না।
দুপুর ২টো। আগরপাড়া স্টেশন রোড ও বিটি রোডের সংযোগস্থল। স্টেশনের দিক থেকে বিটি রোডে উঠে ডানলপের দিকে গাড়ি ঘোরাচ্ছিলেন এক মোটরসাইকেল চালক। কিন্তু একটি গাড়ি তখন তীব্র বেগে ডানলপের দিকে যাচ্ছিল। মোটরবাইকের চালক তা লক্ষ করেননি। দুর্ঘটনা এড়াতে বাসস্টপের দিকে এগিয়ে গিয়ে এক বৃদ্ধকে গিয়ে ধাক্কা মারলেন তিনি। রীতিমতো জখম হলেন ওই বৃদ্ধ। এ ক্ষেত্রেও চালকের হেলমেট ছিল না।
রাত ১১টা। পিছনে দুই তরুণীকে নিয়ে ব্যারাকপুর চিড়িয়ামোড় থেকে কামারহাটির দিকে যাচ্ছিলেন মোটরসাইকেল চালক। তাঁদের আরও দুই বন্ধু যাচ্ছিলেন অন্য একটি মোটরসাইকেলে। দু’টি মোটরসাইকেলের মধ্যে রীতিমতো রেষারেষি শুরু হল। খড়দহ বাজার স্টপের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথম মোটরসাইকেলটি ছিটকে পড়ল রাস্তার ধারে। দুই তরুণী-সহ মোটরসাইকেল চালক আহত হলেন। এ ক্ষেত্রেও হেলমেট ছিল না।
সিঁথির মোড় থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত বিটি রোডে প্রায়ই এমন ছবি চোখে পড়ে। ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। অভিযোগ, তা নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। বাসিন্দারা জানান, শ্যামবাজার থেকে সিঁথির মোড় পর্যন্ত বিটি রোডে মাঝেমধ্যেই মোটরসাইকেল আরোহীর হেলমেট এবং গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু বিটি রোডের সিঁথির মোড় থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত অংশে রাজ্য পুলিশকে কার্যত কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু বিটি রোডই নয়, বিটি রোডের সংযোগকারী অসংখ্য রাস্তাতেও একই ছবি দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, গোপাললাল ঠাকুর রোড, পিডব্লিউডি রোড, নীলগঞ্জ রোডে মোটরসাইকেল চালকদের একাংশ প্রায়ই হেলমেট ছাড়া বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালান। বরাহনগরের বাসিন্দা প্রান্তিক ঘোষ বললেন, “গোপাললাল ঠাকুর রোড কিংবা বিটি রোডে বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেল চলাচল করে। অনেক সময় চালকেরা সিগন্যালও মানেন না। দুর্ঘটনা লেগেই আছে।”
ব্যারাকপুরের বাসিন্দা গোবিন্দ সরকারের কথায়: “রাতের বেলায় ডিস্কো ঠেক কিংবা পানশালা থেকে যুবক-যুবতীরা হেলমেট ছাড়া বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করেন। দুর্ঘটনা ঘটলে শুধু মোটরসাইকেল আরোহীরাই নন, পথচারীরাও জখম হচ্ছেন। কিন্তু পুলিশের দেখা মেলে না।” আগরপাড়ার শুভেন্দু পাত্রের অভিযোগ, “বিটি রোডে বাসস্টপ ছাড়াও অনেকগুলি জায়গায় রোড ডিভাইডার নেই। সর্বত্র ট্রাফিক সিগন্যালও নেই। কিছু মোটরসাইকেল চালক এই সব জায়গা দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে অন্য লেনে ঢুকে পড়েন। এর জন্য অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।”
কেন রাজ্য পুলিশ নিয়মিত মোটরসাইকেলের উপরে নজরদারি করে না? রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, কর্মী কম থাকায় নিয়মিত নজরদারির কাজ হয় না। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জয় বিশ্বাস বলেন, “মোটরসাইকেলের উপরে নজরদারি করা হয়। গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষাও হয়। কিন্তু অজস্র মোটরসাইকেল থামিয়ে পরীক্ষা করায় সমস্যা আছে। এতে ব্যস্ত বিটি রোডে যানজট হতে পারে।” ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পালের কথায়: “বাসিন্দা ও পথচারীদের অভিযোগ শুনেছি। মোটরসাইকেলগুলিকে পরীক্ষা করতে হবে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.