|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা |
খালধার |
হাল ফেরেনি |
কৌশিক ঘোষ |
খালধার আছে খালধারেই।
বছর ছ’য়েক আগেই সার্কুলার খাল-সংলগ্ন এলাকা থেকে ঝুপড়িবাসীদের সরিয়েছিল রাজ্য সেচ দফতর। ঝুপড়িবাসীদের তোলার পরে খালধারের কিছু অংশের সংস্কারও করা হয়েছিল। এখন ফের সেই এলাকা ঝুপড়িবাসীদের দখলে। খালের জলেই চলছে স্নান, কাপড় কাচা, বাসন মাজা এবং প্রাত্যহিক কৃত্য।
শুধু বাগবাজারেই এই বসতি সীমাবদ্ধ নয়। বাগবাজার থেকে শুরু করে টানা বেলেঘাটা পর্যন্ত খালধারে ঝুপড়িবাসীদের দাপট। এ ছাড়াও বিক্ষিপ্ত ভাবে গজিয়ে উঠছে ছোট-বড় নানা ঝুপড়ি। খালের ধারে স্তূপাকার হয়ে রয়েছে আবর্জনা। কোথাও বা অবাধে চলছে শুয়োরের চাষ।
রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “তুলে দেওয়ার পরেও কী ভাবে এখানে ঝুপড়িবাসীরা বসল তার তদন্ত করতে বলেছি দফতরের আধিকারিকদের। সেচ দফতরের জমি ঝুপড়িবাসীকে দখল করতে দেব না।” |
|
শ্যামপুকুরের বিধায়ক শশী পাঁজা বলেন, “বাগবাজারের খালধারের পাশে যে ভাবে ঝুপড়িবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন।”
বাগবাজারের কাছে গঙ্গা থেকে বেরিয়ে এই খালটি আর জি কর হাসপাতালের পাশ দিয়ে রাজাবাজার হয়ে পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটা এবং বাইপাসের মধ্য দিয়ে গিয়ে মিশেছে কেষ্টপুর খালে। খাল পরিষ্কার রাখতে তৎকালীন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায় উদ্যোগী হন।
সেচ দফতরকেও বিষয়টি জানানো হয়।
এর পরে, সার্কুলার ক্যানালের পাড় বরাবর ধাপে ধাপে বেআইনি ঝুপড়ি তোলা হয়। এমনকী, সে সময় উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া ঝুপড়িবাসীদের পরিবারপিছু সরকার থেকে ২০০০ টাকা করে বরাদ্দও করা হয়েছিল। কিন্তু, কয়েক বছর যেতে না যেতেই অবস্থা আবার তথৈবচ।
ঝুপড়িবাসীরা উঠে যাওয়ার পরেই সেচ দফতর এই পাড়গুলি বাঁধায়। পরে কলকাতা পুরসভা এবং বন দফতরের চেষ্টায় সার্কুলার খালের ধারে অনেক জায়গায় গাছ লাগানো হয়েছিল। এ ছাড়াও এই খালের জল কেষ্টপুর খালে নিয়ে গিয়ে ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’-এর মাধ্যমে পরিশোধন করে রাজারহাট অঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। সেই কারণে কলকাতা পুরসভার নিকাশি নালার যে মুখগুলি খালের সঙ্গে যুক্ত সেগুলিকে পুরসভার বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। দূষণ রোধ করতেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু ঝুপড়িবাসীরা বসার ফলে জলে দূষণ বাড়ছে বলে পুরসভার নিকাশি দফতরের দাবি। |
|
পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, “খালের ধারে যেখানে পুরসভা বাগান করে শহরে সৌন্দর্যায়ন করার পরিকল্পনা করেছিল সে কাজও বাধা পাচ্ছে। ঝুপড়িবাসীদের ব্যবহারে জলে দূষণমাত্রা বাড়ার সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। আগে এই জল সরাসরি নিয়ে তা পরিশোধন করে জল সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল। পরে অপরিশোধিত জল নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে দূষণ কমবে।”
হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার জন্য গঙ্গার জল খালের তলা দিয়ে পাইপ দিয়ে নিয়ে গিয়ে পরিশোধন করে জল সরবরাহ করা হবে। ঝুপড়িবাসীরা খালের জল যতই দূষিত করুন না কেন, পাইপের জলের ওপর তার কোনও প্রভাবই পড়বে না।”
খালধার বেদখল হয়ে যাওয়া নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি।”
|
ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ। |
|
|
|
|
|