উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
যশোহর রোড |
যানবাহন যাতায়াতের জন্য যেন নয়, নিশুতি রাতের যশোহর রোড যেন দখলদারের!
সেই দখলদার কখনও রাস্তার পাশেই দাঁড় করিয়ে মদ্যপান করা অটোচালক। কখনও বা রাস্তার পাশে ছোট ধাবায় বসা কোনও মদ্যপ যুবক। কখনও বা রাস্তার উপরেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে পানশালায় ঢোকা এলাকার ‘দাদা’রা। এ সব দৃশ্যেরই দেখা মিলবে রাতের যশোহর রোডে।
বস্তুত, দমদম থেকে দত্তপুকুর পর্যন্ত ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক যশোহর রোডের দু’পাশে এখন প্রায় ২০টি পানশালা রয়েছে। পুলিশ ও আবগারি দফতরের ‘কড়াকড়ি’তে সেই পানশালাগুলি অবশ্য ভিআইপি রোডের মতোই নিয়মমফিক রাত ১২টাতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি পানশালারই নিজেদের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। ফলে ক্রেতাদের গাড়িগুলি দাঁড়ি করিয়ে রাখা হয় যশোহর রোডের উপরেই। বাকি এক চিলতে পথ দিয়েই যাতায়াত করতে হয় অন্য গাড়িকে।
|
তবে রাত ১২টা পেরিয়ে যাওয়ার পরে ভিআইপি রোডের মতো এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ‘আড্ডা’র ব্যাপার নেই। বরং যা রয়েছে তা হল, আশপাশের ছোট ধাবা বা হোটেলগুলিতে ঢুকে পড়া। যেমন, রাত ১১টা নাগাদ দমদমের কাছে এ রকমই একটি ধাবায় দেখা গেল, ডাল-ভাত, রুটি তড়কা বিক্রির পাশাপাশি চলছে মদ বিক্রিও। কেউ কেউ আবার টেবিলে বসেই মদ্যপান করছেন। সাড়ে ১২টা নাগাদ সেই ধাবাতে গিয়েই দেখা গেল বেশ ভিড়। ট্রাকের চালক-খালাসিরাও রয়েছেন সেই ভিড়ে। এক জন জানালেন, আসলে মদের দোকান ও পানশালা বন্ধ হয়ে গেলেই এখানে এমন ভাবে ভিড় বাড়ে। শুধু হোটেল বা ধাবাই নয়, যশোহর রোডের পাশে রয়েছে চোলাই মদের ‘ঠেক’ও। পুলিশ মাঝেমধ্যে হানা দিলে সাময়িক ভাবে দু’য়েক দিন বন্ধ রেখে ফের শুরু হয় ব্যবসা। রাত ১১টা নাগাদ যশোহর রোডের রডকল এলাকায় দেখা গেল, রাস্তার উপরেই একটি অটোস্ট্যান্ড। রাস্তার উপরে খোলা জায়গায় সেই অটোর মধ্যে বসেই চলছে অবাধ মদ্যপান। পিছনে ছোট্ট একটি গুমটির মতো হোটেল। অটোয় বসেই চিৎকার করে সেখানে ‘অর্ডার’ দেওয়া হচ্ছে। সেই হোটেল থেকে আসছে খাবার। কোনও পুলিশ বা ট্রাফিকের দেখা নেই সেখানে। রেহাই নেই পুলিশেরও। রাত দশটা নাগাদ মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় দেখা গেল, সিগন্যাল না মেনে ভ্যানরিকশায় বসে রাস্তা পার হচ্ছেন এক যুবক। দু’পাশের গাড়ি কোনওমতে ব্রেক কষে তাঁকে রক্ষা করল। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ভ্যানচালককে ধমকাতেই ওই যুবকের সমর্থনে ছুটে এলেন স্থানীয় কিছু যুবক। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে চলল তর্কাতর্কি। মদ্যপ এক যুবক শুরু করলেন অশ্লীল গালিগালাজও। শুধু অটোই নয়, রাত ১টা নাগাদ বিমানবন্দরের কাছে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে খালি বাস ও ট্রাক। দেখা গেল, তার মধ্যে বসেও চলছে মদ্যপান। |
পথচারীরা জানান, বাস বা শাট্ল ট্যাক্সির জন্য রাতে অনেক মহিলাকেও যশোহর রোডে দাঁড়াতে হয়। অনেক সময়েই মদ্যপেরা তাঁদের লক্ষ করে কটূক্তি করে। এক মহিলার কথায়: “এই বেআইনি মদের ঠেকগুলি বন্ধ করে দিলেই সব বন্ধ হয়ে যাবে। পুলিশ সব কিছুই জানে। অনেক সময় পুলিশও সেখানে যায়।”
এ সব নিয়ে কী বলছে পুলিশ এবং আবগারি দফতর?
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বললেন, “পুলিশি নজরদারির জন্যই পানশালাগুলি এখন নিয়মমাফিক চলছে। লাইসেন্স ছাড়া মদ বিক্রি বা চোলাই মদের ভাটি ও ঠেকেও হানা দেওয়া হয়। ধরপাকড়ও হয়। তবে বিশেষ কোনও খবর থাকলে সেগুলি পুলিশকে জানাতেও বলা হয়।”
জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সমর স্বর্ণকার বলেন, “কিছু জায়গায় চুরি করে মদ বিক্রি হয়। এদের লাইসেন্স থাকে না। দোকান খোলা থাকলে এখানে মানুষ যায় না। বেশি রাতে সেই সুযোগে এরা দোকান থেকে মদ কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। এ সব জায়গায় নিয়মিতই হানা দিয়ে ধরপাকড় করা হয়। আসলে এগুলি দিন-রাত খোলা থাকে।” চোলাই ঠেক প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য: “প্রচুর চোলাই মদের ঠেক ভাঙা হয়। তবে শুধু ধরপাকড়ই নয়, এ সব ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সচেতন হওয়াটা দরকার।”
সচেতনতার এই অভাবটা অবশ্য প্রায়শ টের পান রাতের যশোহর রোডের যাত্রীরা!
|