|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
নতুন ধাপা |
মিলল ছাড়পত্র |
কৌশিক ঘোষ |
শহরের আবর্জনা ফেলার জন্য কলকাতা পুরসভাকে পূর্ব কলকাতার ৫২.৫ হেক্টর জমি ব্যবহারের অনুমতি দিল রাজ্য পরিবেশ দফতর। এর ফলে জঞ্জাল অপসারণের কাজে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। এই জমিতে গাছ লাগানো ছাড়াও জলাভূমি নির্মাণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা। এ ছাড়াও, আবর্জনার স্তূপ থেকে নিঃসৃত দূষিত
জলীয় পদার্থ যাতে কোনও ভাবে মাটির সঙ্গে মিশে এলাকার মাটিকে দূষিত না করে সে জন্য পুর কর্তৃপক্ষ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণের নতুন প্রকল্প নিয়েছেন।
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভারই জমি পড়ে ছিল। কিন্তু পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র না থাকায় আমরা কাজ শুরুই করতে পারছিলাম না। শহরে আবর্জনা ফেলার ক্ষেত্রে খুব শীঘ্রই সমস্যা দেখা দেবে। এ বিষয়ে ভেবে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। আমরা এসেই ব্যবস্থা নিয়েছি। আর কোনও বাধা নেই। তবে, পদ্ধতিগত যে সমস্ত নিয়ম রয়েছে তা মিটিয়ে কাজ শুরু করতে একটু সময় লাগছে।”
মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার বলেন, “বর্তমানে ধাপার পাশেই পূর্ব কলকাতা জলাভূমি কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য পরিবেশ দফতর পুরসভাকে ৫২.৫ হেক্টর জমিতে আবর্জনা ফেলার অনুমতি দিয়েছে। শর্তসাপেক্ষে এই জমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এই কাজ শুরু হবে।” |
|
পরিবেশ দফতরের শর্ত কী?
৫২.৫ হেক্টরের মধ্যে পুর কর্তৃপক্ষ ১৭.৫ হেক্টর জমিতে শহরের আবর্জনা ফেলতে পারবেন। বাকি যে জায়গা থাকবে সেখানেই পুরসভাকে সৌন্দর্যায়নের কাজ করতে হবে। অন্য দিকে, যেখানে আবর্জনা ফেলা হবে সেখানে যদি কোনও জলাভূমি থাকে, তা হলে সেই জলাভূমির পরিবর্তে অন্য একটি জলাভূমি নির্মাণ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
বর্তমানে পুরসভা পুরনো পদ্ধতিতেই ধাপায় আবর্জনা ফেলে। রাজ্য পরিবেশ দফতর এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা করে দেখেছেন, পুরসভার আবর্জনার স্তূপ থেকে নিঃসৃত দূষিত জল মাটিতে মিশে যাওয়ায় এলাকার মাটি দূষিত হয়। এই দূষণ রোধ করতে এখানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট লাগানো প্রয়োজন। আবর্জনার স্তূপ থেকে যে দূষিত জল বের হয় সেই জল পরিশোধন করে তা একটি নিকাশির মাধ্যমে বের করতে হবে। এই পদ্ধতিতে মাটির দূষণ রোধ করা সম্ভব।
পুরসভার জঞ্জাল ও কঠিন বর্জ্য অপসারণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণেই খরচ হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের জন্য একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানোও হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই নতুন জমিতে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছেন। পুরসভার সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরে দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন আবর্জনা তৈরি হয়। এই আবর্জনা ধাপায় ফেলা হয়। উৎসবের মরসুমে আবর্জনার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ধাপার অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে আগামী তিন বছর এই জায়গা ব্যবহার করা যাবে। তার পর এই ধাপায় জঞ্জাল ফেলার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে। |
|
তবে, নতুন জমিতে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গিয়েছে সেখানে ১৫ বছর পরে ফের আবর্জনা ফেলার জায়গা পাওয়া যাবে না বলে পুর কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। সেই কারণে অন্য একটি বড় জায়গার দরকার। এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার বলেন, “কলকাতা পুরসভাকে ধাপার কাছে নতুন জমি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই। তবে সেখানে নিয়মনীতি মেনে পুরসভা আবর্জনা ফেলছে কি না সেই ব্যাপারেও পুরো নজরদারি করা হবে।”
এই প্রকল্পের কাজ কবে থেকে শুরু হবে?
দেবব্রতবাবু বলেন, “পুরসভা একটি প্রাথমিক রিপোর্ট ন্যাশনাল গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটিকে ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছে। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থাকে দিয়েও চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে। এই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এই সংস্থা সব কিছু বিবেচনা করে পুরসভাকে এই অর্থ বরাদ্দ করবে। তার পরেই কাজ শুরু হবে।”
মেয়র পারিষদ জানান, বানতলার কাছেও রাজ্য সরকার পুরসভাকে প্রায় ২৫০ হেক্টর খালি জমি এই কাজে ধার্য করেছে। যদিও এই জমি সরকারি ভাবে পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়নি। ভবিষ্যতে এই জমিতে আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে পরিকল্পনা করা যেতে পারে বলে দেবব্রতবাবু জানান। তবে, বানতলার কাছে এই জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
|
শহরের আবর্জনা ফেলার নতুন জায়গা। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
|
|
|
|
|