জতুগৃহ আমরির ঘটনায় শোকস্তব্ধ শহরের খেলার দুনিয়া মৃতদের স্মৃতিতে কোনও ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনের কথাও ভাবছে। যুবভারতীতে কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল-প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচের আগে মৃতদের আত্মার শান্তিতে এক মিনিট নীরবতা পালন হয়। ইডেনে রঞ্জি ম্যাচেও ঘুরে ফিরে বারবার আলোচনায় ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। রঞ্জি খেলতে সাত সকালে মাঠে ঢোকার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন প্রচারমাধ্যমের কাছে ঘটনা শুনে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি। আবার মর্মান্তিক দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে ক্লাব তাঁবুতে চলা টিভিই বন্ধ করে দেন মোহনবাগান ক্লাবের টিডি সুব্রত ভট্টাচার্য। সারা দিন ‘ডিপ্রেশন’-এ ডুবে ছিলেন ঝুলন গোস্বামী। এখনও সম্মিলিত উদ্যোগ রূপ পায়নি, কিন্তু অভিশপ্ত ৯ ডিসেম্বরের ঘটনায় প্রাণ হারানোদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাইছে ক্রীড়ামহল। অরুণ লালই হোন বা চুনী গোস্বামী, সকলেই ভাবছেন কী করা যায়। ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান এবং মোহবাগান টিডি সুব্রত ভটাচার্য, দু’জনেই চাইছেন ক্রীড়া দুনিয়াকে একত্রিত করে মৃতদের স্মৃতিতে কোনও উদ্যোগ নিতে।
অরুণ লাল যেমন বলছিলেন, “টিভি দেখা যাচ্ছিল না। আমি পারছিলাম না। সারাদিন মাথার মধ্যে ব্যাপারটা ঘুরেছে। অসহায় ক্রোধ আক্রমণ করেছে। কেন ব্যাপারটা বুঝতে এত দেরি হবে? এটা তো আমার শহর।’’ অরুণ লাল নিশ্চয়ই ভাবছেন কোনও উদ্যোগের কথা, কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতা তাঁকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে এ নিয়ে এখনই আগ বাড়িয়ে বলতে চান না। “নিশ্চয়ই ম্যাচ বা অন্য কিছু করার কথা ভাবা যায়। কিন্তু সেটার একটা সময় আছে। আগে এই ভয়াবহতার রেশ থেকে বেরোই, তারপর নিশ্চয়ই কিছু ভাবা যাবে,” বক্তব্য তাঁর। প্রচারমাধ্যমের কাছেই প্রথম ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কথা শোনেন সৌরভ। বলছিলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমি ভাবতেই পারছি না।” চুনী গোস্বামীর বাড়ি আমরি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। গোটা ঘটনায় শোকাহত চুনী নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন। “এই বয়সে এই ঘটনা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি নিজেকে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলাম। যে কোনও উদ্যোগে নিশ্চয়ই থাকব।” কী করে এত বড় হাসপাতালে এরকম বিধ্বংসী অগ্নিকান্ড হতে পারে, তার উত্তর খুঁজছেন হোসে ব্যারেটো। তাঁর প্রশ্ন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এরকম মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে এতদিন দেখেছি। কিন্তু যেখানে মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন, সেখানে এমন হল কেন? আমিও তো ওখানে চিকিৎসা করাতে যেতাম। আমার টিমের সবাই তো ওখানে যেত।” বোর্ডের বর্ষসেরা মহিলা ক্রিকেটারের পুরস্কার নিতে শনিবার শহর ছাড়ার কথা ঝুলন গোস্বামীর। হতাশায় ডুবে থাকা ঝুলন বলছেন, “কী বলব বলুন? সারাদিন মন খারাপ, চরম ডিপ্রেশনে ডুবে আছি। যে কোনও উদ্যোগে থাকতে রাজি।” আর লিগের কঠিন ম্যাচ জেতার পরও মনমরা মর্গ্যান। বলছিলেন, “মাঠে আসার আগে তো দেখে এসেছিলাম ১০-১২ জন মারা গেছে। ফিরে যা শুনলাম, তা তো ভয়ঙ্কর। বিশ্বের বহু দেশে কোচিং করিয়েছি। এরকম মর্মান্তিক ঘটনা কোনও দিন শুনিনি। তাও আবার হাসপাতালে। ” |