সুনীল ছেত্রী বনাম আলি আসফাক গোলের লড়াই তো দূরে থাক। দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট আঠারো ছাড়া প্রায় একতরফা খেলে সুনীল-নবিদের ভারত আজ হাসতে-হাসতে উঠে গেল সাফ ফুটবল ফাইনালে। সেমিফাইনালে ৩-১ গোলে মলদ্বীপকে ধ্বংস করে। রবিবার ফাইনালে সামনে সেই আফগানিস্তান। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে যাদের কাছে আটকে যাওয়ার পরে স্যাভিও মেদেইরার অশ্বমেধের ঘোড়া দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত টগবগিয়ে ছুটে চলেছে।
অন্য সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে ৯০ মিনিট রুখে দিয়েও অতিরিক্ত সময়ের গোলে নেপাল ০-১ হেরে যায়। ১০২ মিনিটে গোল করেন বেলা অ্যারেজো।
তার পাশে ভারতকে ঘরের মাঠে অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখাল আজকে। এই নিয়ে দক্ষিণ এশীয় ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের টুর্নামেন্টে ভারত আট বার ফাইনালে উঠল। আর এ দিনের দু’টো গোল নিয়ে এ বারের টুর্নামেন্টে সুনীল ছেত্রীর মোট ছয় গোল হয়ে গেল। সর্বোচ্চ স্কোরারের যুগ্ম (অন্য জন অ্যারেজো) সম্মানের থেকেও মোহনবাগান স্ট্রাইকারের পক্ষে যেটা আরও চমকপ্রদ নজিরটুর্নামেন্টে ভারতের চারটে ম্যাচেই তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতে নিলেন। এখানে আসা বিদেশি কোচেরাও সুনীলের খেলায় মুগ্ধ।
মলদ্বীপ কোচ ইস্তভান উর্বানির প্রতিদ্বন্দ্বীকে অহেতুক হালকা ভাবে নেওয়া আর স্যাভিওর ছেলেদের তেজ আজ পুড়িয়ে ছারখার করে দিল মলদ্বীপকে। অধিনায়ক ও টিমের সেরা ফুটবলার আলি আসফাকের চোট থাকা সত্ত্বেও তাঁকে খেলিয়ে ম্যাচটাই ভারতের হাতে তুলে দেন মলদ্বীপ কোচ। স্পষ্ট দেখা গেল, মাঠে লেংচে লেংচে ঘোরাঘুরি করলেন আসফাক। আবার প্রমাণ হল, অর্ধেক ফিট তারকা প্লেয়ারের চেয়ে পুরো ফিট সাধারণ মানের প্লেয়ার অনেক বেশি দামি। না কি ভারতকে হালকা ভাবে নিয়ে অর্ধেক ফিট আসফাককে দিয়েই ম্যাচ জিতবেন ভেবেছিলেন উর্বানি। কোচের তুরুপের তাস অকেজো হয়ে পড়ায় মলদ্বীপ দলটাই যেন মুষড়ে পড়ল। সেই সুযোগ নিয়ে নবি-সুনীল-জেজেরা প্রথমার্ধেই কোণঠাসা করে ফেলেন বিপক্ষকে। একটা সময় তো ওষুধ খেতে আসফাককে মাঠ ছেড়ে যেতে হয় ড্রেসিংরুমে। মিনিট আটেক পর আবার মাঠে নামলেও সারা ম্যাচে তাঁকে যেন খুঁজেই পাওয়া যায়নি। |
ক্লাইম্যাক্সরা গোটা চারেক সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে আজ টেনিস-স্কোরের মতো জিততে পারত ভারত। এটাই ভারতীয় দলের এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচ। প্রচণ্ড গতিতে শুরু করে গোড়াতেই ভারতীয়রা চেপে ধরেন মলদ্বীপকে। প্রচুর দৌড়ালেন নবি-রোকাসরা। বিপক্ষের আক্রমণ এত কম ছিল যে, নির্মল ছেত্রীরা বারবার ওভারল্যাপে গিয়ে সুনীল-জেজেদের পাস বাড়িয়েছেন। আর ক্লিফোর্ড-অ্যান্টনিরা মাঝমাঠের দখল নিয়ে অ্যাটাকিং থার্ডে লোক বাড়িয়ে প্রচণ্ড চাপে রাখেন মলদ্বীপ ডিফেন্সকে। কোচ স্যাভিও দ্রুত গতির ফুটবলের জন্য আগের ম্যাচের উইনিং কম্বিনেশনে অদলবদল ঘটাননি সেমিফাইনালে।
প্রথম মিনিটেই প্রচণ্ড গতিতে উঠে বক্সের মাথায় ক্লিফোর্ড যে অনবদ্য পাস জেজেকে বাড়ান, সেটা নষ্ট করে তিনি অনভিজ্ঞতার পরিচয় দেন। সুযোগ নষ্টের মধ্যেই নবি দলের প্রথম গোলটা পেয়ে যান। ক্লিফোর্ডের ফ্রিকিকের ফ্লাইট মিস করেন জেজে। সেই বল ফলো করে পিছন থেকে তীব্র বেগে উঠে আসা সাইডব্যাক নবি হাফভলিতে ১-০ করেন।
কী করেননি আজ তিনি। ডিফেন্স থেকে উঠে গিয়ে নিজে গোল করেছেন। কয়েকটা গোলের বল বাড়িয়েছেন সতীর্থদের। ডিফেন্সে নেমে এসে স্লাইডিং ট্যাকলে বল ক্লিয়ার করেছেন (প্রথমার্ধে মলদ্বীপের ওই একটাই ভারতীয় ডিফেন্সে ভাল রকম হানা)। সুনীল এ দিন দুটো গোল না পেলে নবিই হতে পারতেন ম্যাচের সেরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা অবশ্য ভাল করেছিল মলদ্বীপ। গোল শোধের মরিয়া চেষ্টাও তাদের বৃথা যায়নি। ম্যাচের এক ঘণ্টার মাথায় গনির ব্যাকপাস ধরে স্যামউইল কাসিমের ৪০ গজের তীব্র শট করণজিৎকে দাঁড় করিয়ে গোলে ঢুকে যায়। তবে মলদ্বীপ কোচের উল্লাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আট মিনিট পরেই বক্সের বাঁ-দিক দিয়ে বল নিয়ে ঢোকার সময় সুনীলকে ধরে না রাখতে পেরে গনি পেছন থেকে জার্সি টেনে তাঁকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেন। পরিষ্কার পেনাল্টি। যার থেকে সুনীল নিজেই গোল করে ভারতকে আবার এগিয়ে দেন। আর শেষ মিনিটে সুনীল মাঝমাঠ থেকে জেজের নিখুঁত পাস বক্সের মাথায় ধরে আগুয়ান মলদ্বীপ গোলকিপারের পাশ দিয়ে গোলে পাঠান।
মলদ্বীপ কোচ ভারতীয়দের ভাগ্যকে ‘ধন্যবাদ’ দিলেও স্যাভিও সাফ বললেন, “ভারত আজ সেরা ম্যাচ খেলেছে। এই ধারাবাহিকতাটাই ফাইনালে ধরে রাখতে হবে আমাদের।”
ভারত: করণজিৎ, নির্মল, গাউলি, গৌরমাঙ্গি, অ্যান্টনি, ডায়াস, ক্লাইম্যাক্স (জুয়েল, ৮৪ মিঃ, সুশীল ৯২ মিঃ), রোকাস, ক্লিফোর্ড, জেজে, সুনীল। |