টোলগে-আগুনে ছারখার ইউনাইটেড
ত্যিই ‘লেডি লাক’ কি কাজ করতে শুরু করল টোলগে ওজবের জীবনে?
গত বারের দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার এ বার মরসুমের শুরুতে গোল পাচ্ছিলেন না। সমালোচনার আগুনের মধ্যে পড়ে কেমন যেন বিপন্নও হয়ে পড়েছিলেন টোলগে। তাঁর হাঁটাচলায় উধাও হয়ে গিয়েছিল সেই রাজাধিরাজ মেজাজটাও। গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছিলেন স্বদেশীয় অ্যালান গাও। তীব্র চাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তুকতাকে বিশ্বাসী টোলগে দু’টো কাজ করেছিলেন। এক) নিজের চুলের ছাঁট বদলে ফেলেছিলেন। দুই) অস্ট্রেলিয়া থেকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন বান্ধবী সেরাপ-কে।
ফল হাতেনাতে!
মারগাওয়ে স্পোর্টিং ক্লুবের বিরুদ্ধে চোখধাঁধানো গোলে আই লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে জেতানোর পর যুবভারতীতেও তাঁর পা থেকে ঠিকরে বেরোল ‘নির্ভরতা’। প্রয়াগ ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে লাল-হলুদকে জেতালেন কলকাতা লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচও। কোন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় টোলগের আবার আলোয় ফেরা? এ দিন প্রথম গোলের পর মাঠ থেকেই চুমু ছুড়ে দিয়েছিলেন যাঁকে লক্ষ্য করে, সেই বান্ধবীকেই বেশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার। “সেরাপ কলকাতায় আসার পরেই আবার আমি নিয়মিত গোল পাচ্ছি। লেডি লাক বলতেই পারেন। মনে হচ্ছে দম ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। মারাত্মক চাপটা সরে যাচ্ছে” বলতে বলতে অপেক্ষমান সমর্থকদের ভিড়ে হারিয়ে গেলেন দিনের নায়ক।
গোল-উৎসব। দলকে ট্রফির দৌড়ে ফিরিয়ে টোলগে। ছবি: উৎপল সরকার।
ওডাফা ওকোলি যা পুরোপুরি পারছেন না, তা কী ভাবে করছেন টোলগে? লাল-হলুদের বিদেশি স্ট্রাইকারের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন যিনি, সেই সুভাষ ভৌমিক বলছিলেন, “আমি এ রকমই খেলতাম। প্রচণ্ড স্পিডের সঙ্গে শক্তি মিশিয়ে। টোলগেও সেটা করে। বারবার উইংয়ে সরে যায়। তার পর ডান পায়ের একটা আউটসাইড ডজ করেই গতি বাড়িয়ে আসল কাজটা করে ফেলে।” কলকাতায় কোচিং করাতে আসার পর যে টিম তাকে সবথেকে বেশি অস্বস্তিতে ফেলেছে, সেই ইউনাইটেডকে উপড়ে ফেলতে টোলগেকে দিয়ে সেই ‘কাজটাই’ শুক্রবার করালেন ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। নিজের স্ট্র্যাটেজি বলতে গিয়ে মজাও করলেন ম্যাচ শেষে। “টোলগে আসলে মাঠের যে দিকটা ছায়া, সে দিকে খেলতে খুব পছন্দ করে। তাই ওকে প্রথমার্ধে বাঁ-দিকে, দ্বিতীয়ার্ধে ডান দিকের ছায়ায় খেলালাম আজ।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইনদওর দেখেছিল সহবাগ-ঝড়। শুক্রবার দুপুরে যুবভারতী দেখল লাল-হলুদ আগুন। ইয়াকুবু-লালকমলদের নিয়ে তৈরি ইউনাইটেড দল যাতে মাঠে কার্যত পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’এক বার গোলের সুযোগ পেয়ে গেলেও, ওপারা-মেহতাবদের বিরুদ্ধে এ রকম করুণ অবস্থা সাম্প্রতিক কালে ইউনাইটেডের হয়নি। কোন অঙ্কে আই লিগ ও কলকাতা লিগে অপরাজিত টিমকে বধ করলেন মর্গ্যান? চুম্বকে তিনটি কারণ উঠে আসছে। এক) নিজের রক্ষণ জমাট করে নাগাড়ে আক্রমণের ঢেউ তোলা। দুই) ম্যান মার্কিং এবং পায়ের জঙ্গল তৈরি করে ভয়ঙ্কর ইয়াকুবুকে অকেজো করে দেওয়া। তিন) শুরু থেকেই লোক বাড়িয়ে মাঝমাঠের দখল নিয়ে নেওয়া।
তিনটে অঙ্কই সফল করতে হাতে একটা কাগজ নিয়ে রিজার্ভ বেঞ্চে এসে বসেছিলেন মর্গ্যান। টিম যখনই একটু বেচাল হয়েছে, তখন ওই কাগজ দেখেছেন আর বদলে দিয়েছেন টিমের খেলার স্টাইল। ব্রিটিশ কোচের সুবিধা হয়ে গিয়েছিল, মেহতাব হোসেন মাঝমাঠে ফেরায়। অসমসাহসী মেহতাবকে চতুর মর্গ্যান ব্যবহার করলেন বিপক্ষের গোলমেশিন ইয়াকুবুকে অকেজো করতে। ইয়াকুবুর দলের মাঝমাঠের স্তম্ভ লালকমলের ঘাড়ে তুলে দিয়েছিলেন হরমনজিৎ খাবরাকে। আর তাতেই ইউনাইটেড নুইয়ে পড়ল।
চার টাচে টোলগের অসাধারণ প্রথম গোলটা এল। মেহতাব-ওপারা হয়ে খাবরার ব্যাকভলি এসেছিল টোলগের কাছে। টোলগের দু’নম্বর গোল ইউনাইটেড গোলকিপার অভিজিৎ মণ্ডলের ভুলে। আর ইস্টবেঙ্গলের এ বারের আবিষ্কার অনূর্ধ ১৯ লেনের গোলটা সারাক্ষণ বলের পিছনে তাঁর লেগে থাকার ফসল। সৌমিকের ক্রস থেকে বল পেয়েছিলেন লেন।
আই লিগ টেবিলে দু’নম্বরে। কলকাতা লিগ জয়ের আলো দেখা যাচ্ছে এ দিনের পর। মর্গ্যান-ব্রিগেড আবার ট্রফির দিকে দৌড়তে শুরু করল মনে হচ্ছে।

ইস্টবেঙ্গল: সন্দীপ, নওবা, ওপারা, গুরিন্দর, রবার্ট (সৌমিক), ভাসুম (সঞ্জু), মেহতাব, খাবরা, রবিন (পেন), টোলগে, লেন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.