বিপর্যয় কপালে অবধারিত ছিল। হয়েওছে। কিন্তু তামিলনাড়ু ম্যাচ হেরে রঞ্জিতে বাংলা যখন ধ্বংসের মুখে, তখন নতুন করে সৃষ্টির খোঁজে নেমে পড়ল সিএবি। অবনমন বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা হিসাবে বাকি দু’টো ম্যাচেও অধিনায়ক করে দেওয়া হল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে!
দিনের প্রথম দু’ঘণ্টাতেই ম্যাচ শেষ। নাটকীয় কোনও উপাদান ছাড়াই। ঘড়ির কাঁটা যখন সকাল ন’টার আশেপাশে, বালাজির শর্ট পিচড বল সৌরভের (৩৩) ব্যাটের কানা নিয়ে চলে গেল দ্বিতীয় স্লিপে। লক্ষ্মীরতন শুক্ল গত দিনের স্কোরের সঙ্গে ২৩ রানের বেশি যোগ করতে পারলেন না। সৌরভ নেই, লক্ষ্মী নেই, হার আর আটকায় কে? স্কোরবোর্ডে ২৪৬ তুলতে না তুলতেই দম আটকে গেল বাংলার। জেতার জন্য তামিলনাড়ুর দরকার ছিল মাত্র ৩২। যা তুলতে পাঁচটা ওভারও লাগল না মুরলী বিজয়দের।
স্বপ্নেও তখন কারও পক্ষে ভাবা সম্ভব ছিল না, এই বিপর্যয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও চেষ্টা থাকতে পারে। বরং ইডেনে তখন ময়নাতদন্ত চলছে, সবুজ পিচ কী তা হলে ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে গেল বাংলার জন্য? তিন, এক, কিছুই তো এল না। কপালে জুটেছে শুধু শূন্য। পয়েন্ট তালিকা দেখাচ্ছে, বাংলা ৪ ম্যাচে ৫। হাতে পড়ে দু’টো ম্যাচ। দিল্লি আর বরোদা। এলিটে থাকতে চাই অন্তত আরও আট পয়েন্ট। সম্ভব কখনও? ড্রেসিংরুমে ততক্ষণে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সতীর্থদের বলেও দিয়েছেন, আর অধিনায়কত্ব নয়। দু’টো ম্যাচের দায়িত্ব ছিল। নিয়েছেন। ব্যস।
কে জানত, মাঝ-দুপুরেই ওঁত পেতে আছে নাটকীয় পট পরিবর্তন? |
সবার ধারণা ছিল, নিরামিষ দল নির্বাচনী সভা হবে। ঠিক হবে দিল্লি ম্যাচের টিম। সৌরভ মাঠ থেকে বাড়িও চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার অনুরোধে ফের তাঁকে আসতে হল সিএবি-তে। সৌরভকে প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেন, বাকি দু’টো ম্যাচের দায়িত্ব নিতে। তাতে যদি অবনমন বাঁচে। মনোজ তিওয়ারি থাকবেন দলে। কিন্তু নেতৃত্বের দায়িত্ব সৌরভ-ই নিন। মনোজের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হবে।
সিএবি-র অনুরোধে সম্মতি দিয়ে দেন সৌরভ। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তাঁর অস্ট্রেলিয়ায় কমেন্ট্রিতে ব্যস্ত থাকার কথা। কারণ, ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চালু হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সৌরভ জানিয়ে দেন, বরোদায় বাংলার শেষ ম্যাচ খেলেই তিনি ফ্লাইট ধরবেন মুম্বই থেকে। আর আচমকা অধিনায়ক বদলের পিছনে দু’টো কারণ তুলে ধরছে সিএবি। এক) অবনমনের ছায়া যখন দলকে প্রায় গিলে ফেলেছে, তখন মনোজকে নেতৃত্ব দেওয়া মানে তাঁকে আরও চাপের মুখে ঠেলে দেওয়া। টিম যদি মনোজের নেতৃত্বে প্লেটে নেমে যায়, তা হলে তাঁর ব্যাটিংয়েও প্রভাব পড়তে পারে। দুই) ‘টিম সৌরভ’-কে অনেক বেশি চনমনে দেখাচ্ছে ‘টিম মনোজে’র চেয়ে। পয়েন্ট আসুক চাই না আসুক।
সব ঠিক আছে। কিন্তু অবনমন বাঁচবে তো? এবং ঘুরে দাঁড়ানোর যে ‘প্রেসক্রিপশন’ সৌরভ দিচ্ছেন, তা এ রকম: ...ড্রেসিংরুমে আলোচনা করে লাভ নেই। ঠিকঠাক প্র্যাক্টিস করতে হবে। মাঠে নেমে খেলে দেখাতে হবে।
পিচের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। বরং যে সবুজ পিচে সাড়ে তিন দিন ধরে বালাজিদের মোকাবিলা করতে হল, তেমন পিচই দরকার। দিল্লি ম্যাচেও থাকুক সবুজ পিচ। প্রথম দুই ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও এই পিচ দরকার ছিল।
...ক্যাচ ফেলা বন্ধ করতে হবে। আরও আঁটোসাঁটো বোলিং চাই। তামিলনাড়ুকে ৩৯০ তুলতে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। এই উইকেটে রানটা ২১০-২২০-র মধ্যে থাকা উচিত ছিল।
কী দাঁড়াল? সৌরভ বাঁচার ফর্মুলা খুঁজছেন। সিএবি ‘সৌরভ’ নামের ফাটকা খেলে অবনমনের ‘ম্যাচ’ জিততে চাইছে। দুইয়ে মিলে শেষ পর্যন্ত বাংলা ক্রিকেটের অন্তর্জলী যাত্রা আটকায় কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর |
বাংলা ১৭৬ ও ২৪৬
(লক্ষ্মী ৭৩, ঋতম ৩৫, সৌরভ ৩৩, ইয়ো মহেশ ৩-৬৭, বালাজি ২-৪০)
তামিলনাড়ু ৩৯১ ও ৩৪-০ (মুকুন্দ ২৫ ন.আ.)
|
গ্রুপ ‘বি’-র তলানিতে বাংলা। ৪ ম্যাচ থেকে ৫ পয়েন্ট। ম্যাচ বাকি দিল্লি ও বরোদা। বাকিরা কে কোথায়: তামিলনাড়ু: ৪ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট বরোদা: ৫ ম্যাচে১৩ পয়েন্ট
মধ্যপ্রদেশ: ৪ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট দিল্লি: ৫ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট |
|