|
|
|
|
|
|
প্রাথমিক স্কুল |
মুমূর্ষু শিক্ষা |
দেবাশিস ঘোষ |
ছাত্র নেই বাংলা মাধ্যমের স্কুলে। শিক্ষকদের ছাত্রছাত্রীদের খোঁজে যেতে হয়। কিন্তু উর্দু ও হিন্দি মাধ্যমের স্কুলে ছাত্রছাত্রী উপচে পড়ছে। এমনই বিপরীতধর্মী ছবি দেখা যাবে হাওড়ায় পুরসভা পরিচালিত স্কুলগুলিতে। যদিও বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলি বাঁচিয়ে তোলার জন্য প্রশাসনের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “পুরসভার বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলিকে বাঁচিয়ে তুলতে স্কুলভবনের মেরামতি ও পড়াশোনার মান উন্নয়ন দরকার। শিক্ষা দফতরের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়: “এই ব্যাপারে আমাদের নতুন পরিকল্পনা আছে।”
টিকিয়াপাড়ার রাজারাম দাস মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ১৫। স্কুলটি বাংলা মাধ্যমের। ছাত্র খুঁজতে শিক্ষকদের মাঝেমধ্যে টিকিয়াপাড়ার বস্তিতে যেতে হয়। শিক্ষক গুরুচরণ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, এই অবস্থার জন্য এ বছরই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
প্রায় একই অবস্থা সালকিয়ার নস্করপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এটিও বাংলা মাধ্যমের স্কুল। ভাড়া বাড়ি বলে সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থে মেরামতি সম্ভব হয়নি। ক্লাস ঘরগুলি অন্ধকার। গ্রীষ্মে ঘামতে ঘামতে ক্লাস করতে হয়। শিক্ষকরা জানালেন, উপস্থিতির হার খুবই কম। মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাই এখানে পড়তে আসে। উপস্থিত ছাত্ররা জানাল, মিড-ডে মিলের জন্য তারা এসেছে। পুরসভা সূত্রে খবর, ১৯৯৪-এ পুরসভার বাংলা মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা ছিল আট। আজ দুই। তার মধ্যে আবার রাজারাম দাস প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
বিনামূল্যে পড়াশোনা, বই, মিড-ডে মিল থাকা সত্ত্বেও কেন এই হাল? |
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
নেতাজি সুভাষ রোডের বাসিন্দা কেদারনাথ আঢ্য বলেন, “পড়াশোনার মান ভাল নয়। প্রতিযোগিতার বাজারে মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা এই স্কুলগুলি নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন।” আর এক বাসিন্দা মিতা বসু বলেন, “এই সব স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ আছে। বাবা-মারা চান যাতে একই স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়া যায়। পুরসভার স্কুলে ভর্তি করলে সমস্যা বাড়ে।” পুর-শিক্ষা বিভাগের অফিসার সুপ্রিয়া হাটুয়ার কথায়: “শহরে ছেলেমেয়েকে ইংরাজি কিংবা হিন্দি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করার প্রবণতা বেশি। তাই পুরসভার স্কুলে ছাত্র পাওয়া যাচ্ছে না।”
পাঁচটি হিন্দি ও তিনটি উর্দু মাধ্যমের স্কুল চালায় হাওড়া পুরসভা। পুরসভা সূত্রে খবর, স্কুলগুলি ভাল চলছে। প্রতিটিতে গড়ে ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। শিবপুর হিন্দি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মোহনকুমার রজক বলেন, “হিন্দি ও উর্দু মাধ্যমের স্কুলগুলিতে ভর্তির চাপ বাড়ছে।” একই বক্তব্য শিবপুর বস্তি উর্দু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক নাসির আহমেদের।
হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “সেখানে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেখানে সাক্ষরতা অভিযান বা বয়স্ক প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে হিন্দি ও উর্দু মাধ্যম স্কুলগুলি যথেষ্ট ভাল চলছে। পুরসভা পরিচালিত মোট ১৭টি স্কুলের মধ্যে সালকিয়া নস্কর পাড়ার বাংলা মাধ্যমের স্কুল এবং শিবপুর বস্তি উর্দু প্রাথমিক স্কুল ভাড়া বাড়িতে রয়েছে। ফলে মেরামতির সুযোগ নেই। তবে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য পাওয়া ১২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকায় শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ ও স্কুল ভবন মেরামতি করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|