খেলা
সুদিন ফেরাতে
তাঁরা অনেকেই বাংলার ফুটবলে চেনা মুখ। কেউ কেউ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হাওড়ার সেই সব প্রাক্তনীরা এ বার জেলা থেকে নতুন ফুটবলার তুলে আনতে উদ্যোগী হলেন। নিজেরাও ফিরে এসেছেন মাঠে। আসছে সাফল্যও।
এক সময়ে হাওড়াকে ফুটবলের সূতিকাগার বলা হত। আজ সেই সুনাম নেই। সুদিন ফিরিয়ে আনতে এ বার উদ্যোগী হলেন জেলারই কিছু প্রাক্তন ফুটবলার। বছর দুয়েক আগেই তাঁরা গড়ে তুলেছেন হাওড়া ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাব। জেলায় ফুটবলের প্রসারের পাশাপাশি দুঃস্থ কোচ এবং ক্রীড়া সংগঠকদের পাশে দাঁড়ানোও তাঁদের লক্ষ্য। প্রাক্তন ফুটবলার হীরালাল দাস, সুকান্ত লাহা, মনোজিৎ দাস, শেখ সিকান্দর, সুখেন্দু সরকার, বিজয় পাল, তনুজ বল্লভ, আশিস পালচৌধুরী, অলকেন্দু বিশ্বাস, রবীন দাস, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়দের উদ্যোগে গোড়া থেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোক চট্টোপাধ্যায়, বিনয় পাঁজা, অশোক নাগ, শঙ্কর সরকার, জহর দাস, শুভঙ্কর মৈত্রের মতো প্রাক্তনীরা।
নিজস্ব কোনও জায়গা নেই। মন্দিরতলার সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ক্রীড়াকেন্দ্রে চলে ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাবের অফিস। সংগঠনের সভাপতি অমিয়বাবু বয়সের ভারে অসুস্থ। অসুস্থ সচিব অশোক চট্টোপাধ্যায়ও। তাই সংগঠনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন হীরালাল, সুকান্তরাই। সহ-সচিব হীরালালবাবু বললেন, “গত দশ বছরে হাওড়ায় ফুটবল অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। ভাল ফুটবলার উঠে আসছে না। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ক্লাব নতুন ফুটবলার তৈরির চেষ্টা করলেও উন্নত কোচিং এবং পরিকল্পনার অভাবে প্রচেষ্টা তেমন ভাবে ফলপ্রসূ হচ্ছে না।”
ইতিমধ্যে সমীক্ষা করে জেলার ৩০টি কোচিং ক্যাম্পকে বেছে নিয়েছে হাওড়া ভেটারেন্স স্পোর্টস ক্লাব। প্রতিটি ক্যাম্পকে অনুশীলনের জন্য ছ’টি করে বল দেওয়া হয়েছে। উদ্যোগী সংস্থার সদস্য সুখেন্দু সরকার জানালেন, ২০ জন প্রাক্তন ফুটবলারকে নিয়ে শুভাশিস সরকারের নেতৃত্বে একটি পর্যবেক্ষক দল গঠন করা হয়েছে। দলটি বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্পে গিয়ে সেই ক্যাম্পের কোচিং পদ্ধতি, খুদে ফুটবলারদের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া এবং উঠতি ফুটবলারদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। শরৎ সদনে কোচেস ওয়ার্কশপে জেলার প্রায় ৭০ জন কোচ অংশ নেন। কোচিং পদ্ধতি নিয়ে কোচ জহর দাস, স্পোর্টস মেডিসিন নিয়ে চিকিৎসক শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং রেফারিং নিয়ে গোপীনাথ পাইন ও প্রদীপ নাগ বক্তব্য রাখেন।
হয়েছে কোচ, ট্রেনারদের নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরও। নিজেরাও মাঠে ফিরেছেন। সম্প্রতি কোচবিহারে একটি নৈশ ভেটারেন্স টুর্নামেন্টের ফাইনালে কালিম্পং ভেটারেন্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। প্রাক্তন ফুটবলার সুকান্ত লাহা জানালেন, চলতি মাসেই ক্লাব সদস্যদের নিয়ে ভেটারেন্স ফাইভ এ-সাইড ফুটবল প্রতিযোগিতা হবে। বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্পে অনূর্ধ্ব ১৯ ফুটবলারদের নিয়ে একটি নাইন এ-সাইড প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হবে। তাঁর কথায়: “কোচিং ক্যাম্পগুলি থেকে অনূর্ধ্ব ১২ এবং অনূর্ধ্ব ১৪ বিভাগে ২৫ জন করে ফুটবলারকে বেছে নিয়ে আমরা অনাবাসিক ফুটবল ক্যাম্প চালু করার পরিকল্পনা করেছি। রাজ্য ক্রীড়া দফতরের আর্থিক সহায়তা পেলে ভাল হত।” সহ-সচিব হীরালালবাবু বললেন, “অনাবাসিক ক্যাম্প চালুর জন্য হাওড়া পুরসভা মৌখিক ভাবে সপ্তাহে তিন দিন কর্পোরেশন স্টেডিয়াম দিতে রাজি হয়েছে। লিখিত অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছি।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.