|
|
|
|
গ্রেফতার ফব লোকাল কমিটির সদস্য |
গোঘাটে খুন তৃণমূল নেতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
স্কুলভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ চলছিল স্কুলগেটের বাইরে। সেখানেই হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এক তৃণমূল নেতা।
শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গোঘাটের শ্যাওড়া ইউনিয়ন হাইস্কুলের সামনে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শেখ নঈমুদ্দিন (৩৯)। তাঁর বাড়ি আমডোবা গ্রামে। পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতাকে মহকুমা হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যাওড়া ইউনিয়ন স্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচন আগামী ১৮ ডিসেম্বর। শুক্রবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সোমবার ওই স্কুলে মনোনয়ন জমা দেন ফব প্রার্থীরা।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পালের নেতৃত্বে দলের লোকজন ছ’টি আসনে মনোনয়ন দেন। সিপিএম মনোনয়ন দেয়নি। দলের তরফে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেও শুক্রবার নঈমুদ্দিন দলবল নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন তোলেন। লেখালেখির সময়ে তাঁকে গুলি করে পালায় দুষ্কৃতীরা।
নঈমুদ্দিনের সমর্থকদের অভিযোগ, সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের ‘মদতপুষ্ট’ দুষ্কৃতীরাই গুলি করেছে। বলদেব পাল-সহ কয়েক জনের নামে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান তাঁরা। তৃণমূলের দাবি, বলদেব ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থক। এই ঘটনায় ধরা হয়েছে মদন ঘোষ নামে ফরওয়ার্ড ব্লকের গোঘাট লোকাল কমিটির এক সদস্যকে। যদিও খুনের ঘটনাটিকে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলেই মনে করছেন বামনেতৃত্ব। |
|
ছবি: মোহন দাস। |
তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, নঈমুদ্দিন এক সময়ে সিপিএমের প্রভাবশালী নেতা অভয় ঘোষের ‘অনুগামী’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনের পরে নঈমুদ্দিন যোগ দেন তৃণমূলে। তা নিয়ে তৃণমূলের ভিতরে যথেষ্ট অসন্তোষ ছিল। ইট-বালির ব্যবসায়ী নঈমুদ্দিনের বিরুদ্ধে এক সময়ে তৃণমূল সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ ছিল। যদিও সম্প্রতি তাঁকে তৃণমূলের দলীয় কমিটির সদস্যও করা হয়েছিল। শ্যাওড়া ইউনিয়ন হাইস্কুলের নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে তিনি দলে ‘প্রভাব’ বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন বলে দলের একাংশ মনে করছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাল বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছিলাম যাতে নঈমুদ্দিনেরা প্রার্থী না দেয়। তবে আমাদের এই বিরোধের সুযোগ নিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএম। কেননা ওই এলাকায় এখনও সিপিএমের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
শেখ নঈমুদ্দিনের দাদা হারুন-অল-রশিদ আবার বলেন, “আমরা বরাবরই কংগ্রেসের সমর্থক। এক সময়ে সিপিএমের সঙ্গে বাধ্য হয়ে থাকতে হয়েছি। কিন্তু তাঁদের খারাপ কাজ দেখে আমরা বেরিয়ে এসেছি। তাই ফরওয়ার্ড ব্লক-সিপিএমের মদতে দুষ্কৃতীরা ভাইকে মেরে দিল।”
তৃণমূল বিধায়ক তপন মজুমদার বলেন, “আমরা কর্মী-সমর্থকদের সংযত রেখেছিলাম। কিন্তু গোঘাটে ঘটনার পরে ফরওয়ার্ড ব্লক-সিপিএমের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ হবে। মানুষ এই ঘটনা মেনে নেবে না। ষড়যন্ত্রকারী সিপিএম ও ফব নেতাদের ধরতে পুলিশের কাছে দাবি করা হয়েছে।”
গোঘাটের বিধায়ক ফরওয়ার্ড ব্লকের বিশ্বনাথ কারক অবশ্য বলেন, ‘‘আমি ওই এলাকার বাসিন্দা। বলদেব পাল নামে আমাদের দলের কোনও কর্মী বা সমর্থক নেই। তৃণমূলের গোষ্ঠী বিবাদের জেরেই এই খুন হয়েছে। প্রকৃত তদন্ত হলে তা প্রকাশ্যে আসবে।” মিথ্যা অভিযোগে মদনবাবুকে গ্রেফতার করা হল বলে তাঁর দাবি। অন্য দিকে, সিপিএম নেতা ভরত ঘোষ বলেন, “আমাদের লোকেরা দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া। তৃণমূল এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই নেতা খুন হয়েছেন।” |
|
|
|
|
|