উত্তর প্রদেশের বেনারসের প্রাচীন কালীমন্দির ও কোচবিহার রাজ পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষণাবেক্ষণে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। বিশদে খোঁজ নিতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নেতৃত্বে বিধায়কদের একটি দল বেনারসে যেতেও আগ্রহী। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক খোঁজখবর নিতে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্টের সভাপতি তথা জেলাশাসক মোহন গাঁধীকে নির্দেশও দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। রাজ্য সরকারের এমন উদ্যোগে কোচবিহারের রাজাদের স্মৃতি বিজড়িত এই মন্দির সংস্কার-সহ দেবোত্তর ট্রাস্টের আওতাধীন সম্পদ রক্ষা নিয়ে আশার আলো দেখছেন জেলার বাসিন্দারা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “বেনারসের ওই সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে কেন্দ্রের সহযোগিতা নেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের একটি দল প্রয়োজনে সেখানে যাবে। কোচবিহারের জেলাশাসককে একশো একর জমির ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেছি।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য তথা কোচবিহারের নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “রাজ পরিবারের আমলে তৈরি কালীবাড়ি-সহ প্রায় একশো একর জমির রক্ষণাবেক্ষণে দীর্ঘদিন কোনও পরিকল্পনা ছিল না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নেতৃত্বে সেখানে বিধায়কেরা গিয়ে সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নিলে জমি দখলের অভিযোগ থেকে মন্দির সংস্কারে অবহেলা, সব ব্যাপারেই কাজ হবে।” এরই পাশাপাশি বৃন্দাবন ধাম মন্দির রক্ষনাবেক্ষণেও জোর দিয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসন ও দেবোত্তর ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, বেনারসের ওই কালীবাড়ি ছাড়াও রাজাদের আমলে লোলার্ক কুণ্ড নামে আরও একটি ধর্মীয় স্থান রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বেনারসের মন্দির ও লাগোয়া এলাকায় কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্টের অধীন একশো একর জমিও রয়েছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশ কিছু জমি বেদখল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। সংস্কার না-হওয়ায় ধুঁকছে প্রাচীন ওই মন্দিরও। শনিবার কোচবিহার উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ খরচ নিয়ে একটি বৈঠকে যোগ দিতে এসে গোটা পরিস্থিতি জেনে সেখানেই জেলাশাসককে বিশদে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। কোচবিহারের জেলাশাসক বলেন, “নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” এতে খুশি কোচবিহার শহরের বাসিন্দারাও। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বেনারসের কালী মন্দির ছাড়াও কোচবিহারের মহারাজা লক্ষ্মীনারায়ণের আমলে লোলার্ক কুণ্ড নামে শিবমন্দির স্থাপিত হয়। মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণ ১৮৩৬ সালে বেনারসে গিয়েছিলেন। ১৮৩৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ১৮৪৩ সালে শিবেন্দ্রনারায়ণ লোলার্ক কুণ্ড সংস্কার করেন। ১৯০১ সালে বেনারসে কালীমন্দির, হাওয়াখানা সংস্কার করে কোচবিহার স্টেট পিডব্লিউডি। সোসাইটির কর্মকর্তা অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের অভিষেক হয়। তাঁর শৈশবও সেখানে কেটেছে। তাঁর স্মৃতিজড়িত ঐতিহ্য রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য।” |