আন্তর্জাতিক সঙ্কটের কালো ছায়া যে এ দেশেও ঘনাচ্ছে, তা আজ স্বীকার করে নিয়েছে সরকার। আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যবর্তী পর্যালোচনা অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের বদলে সাড়ে সাত শতাংশে নেমে আসবে। এই হার যে যথেষ্ট নয়, তা মানছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। তবে আগামী বছরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা কেন্দ্রের। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলিতে সঙ্কট বাড়লে তার প্রভাব যে এ দেশে পড়বে, তা স্বীকার করে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রক।
সরকার পতনের আশঙ্কা থেকেই অকাল নির্বাচন এড়াতে খুচরো ব্যবসার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে বলে গত কালই স্বীকার করেছিলেন প্রণব। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যর্থতার জন্য গত কাল সুষমা স্বরাজ মনমোহন-সরকারের গদি ছাড়ার যে দাবি তুলেছিলেন তাকে কটাক্ষ করে প্রণব আজ বলেন, “ক্ষমতায় আসতে চাইলে আপনাদের আরও আড়াই বছর ধৈর্য ধরতে হবে।” তাঁর কথায়, “আমি এই দাবি মানব না, গদিও ছাড়ব না। আমি জানি আপনারা অধৈর্য। আরও আড়াই বছর অপেক্ষা করছেন না কেন?”
সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেন্দ্র বুঝিয়েছে, বিলগ্নিকরণ কর্মসূচির সাফল্য নিয়ে তাদের আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া ভর্তুকির বহরও বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্র। তবে প্রণবের যুক্তি, সর্বত্র ভর্তুকি দিলে উন্নয়নের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এই সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রের আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচিতে আজ তাই ফের বিরোধীদের সাহায্য চেয়েছেন প্রণব। তাঁর যুক্তি, মতপার্থক্য থাকা সত্বেও সরকার-বিরোধী পক্ষ মিলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো সম্ভব। তবে মনমোহন-সরকার আমজনতার কথা ভাবছে না বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ করছেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রণব। গত কাল সুষমা প্রণবকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, “প্রণবদা, গ্রামের মানুষের কথা ভাবুন।” আজ জবাবি বক্তৃতায় প্রণব যখন পরিসংখ্যান দিচ্ছেন, তখনও বিরোধীদের তরফে কটাক্ষ করে বলা হয়, “এ সব গ্রামে গিয়ে বলুন।” জবাবে প্রণব বলেন, “স্নাতক স্তর পর্যন্ত আমি গ্রামেই ছিলাম, কনট প্লেসে নয়।”
প্রণবের যুক্তিতে বিরোধীরা সন্তুষ্ট নন। কাল রাজ্যসভার মতো আজও বাম এবং বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এক সঙ্গে কক্ষ ত্যাগ করে। |