|
লীলা সাহা।
ফাইল চিত্র। |
আজ, শনিবারই বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। ফিরবেন-ও। কিন্তু নিথর হয়ে। কলকাতায় আমরি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দমবন্ধ হয়ে মারা গেলেন পূর্বস্থলীর ওই বধূ, লীলা সাহা (৫১)।
বুধবারই ঢাকুরিয়ার ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পূর্বস্থলী থানার পাটুলির কাছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। আগের দিন কলতলায় পড়ে গিয়ে গোড়ালিতে চোট পান। এর পরে বুধবার ভোরে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচার হয় তাঁর গোড়ালিতে। তার পরেই এই মর্মান্তিক পরিণতি।
লীলাদেবীর স্বামী মহীতোষবাবু বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কর্মী। তাঁর কথায়, “আমি সবে বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসেছি। শুক্রবার সকালে হাসপাতালের সামনে গিয়ে একেবারে ‘থ’ হয়ে যাই। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।” তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভাইপো সোমনাথ। তাঁর কথায়, “তখন একের পর এক দেহ বেরোচ্ছে হাসপাতাল থেকে। সে দিকে তাকিয়ে শরীর খারাপ লাগছিল। তবু দাঁড়িয়েই ছিলাম। কেউ কিছু জানাতে পারছিল না।”মহীতোষবাবুরা এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকেই হাসপাতালে। লীলাদেবী ছিলেন তিন তলায়। শেষমেশ বেলা ৩টে নাগাদ ‘মৃত্যুর মিছিল’ থেকে নিজের স্ত্রীকে খুঁজে বের করেন মহীতোষবাবুই। সাহা দম্পতির একমাত্র মেয়ে সুদীপা কাটোয়া কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পদার্থবিদ্যায় অনার্স। সুদীপার কাকা অসীমবাবু বললেন, “ওই হাসপাতালে আগুন লেগেছে শুনেই ও কেমন যেন পাগলের মতো করতে থাকে। ওকে টিভি-র সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বৌদির মৃত্যুর খবর এখনও ওকে জানানো হয়নি। আমরাই আগলে রেখেছি। কিন্তু ভেবে পাচ্ছি না কী ভাবে ওকে এই দুঃসংবাদ দেব।” পরিবারের বধূ বীনাদেবী বলেন, “ভাইঝির জন্য চোখের জলকে বাগ মানাতে হয়েছে।”
সকালেই টিভির পর্দায় নিখোঁজ তালিকায় লীলাদেবীর নাম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন তাঁর আত্মীয়স্বজন। বার বার পরিচিত এক সাংবাদিককে ফোন করে খোঁজ নিচ্ছিলেন। পরে দুপুরের দিকে মেলে লীলাদেবীর নিথর দেহ। তাঁর পরিবারের ক্ষোভ, টিভিতে বা হাসপাতাল থেকে মাইকে যে সব নম্বরে ফোন করতে বলা হচ্ছিল, সেখানে বার বার সাহায্য চেয়েও কোনও লাভ হয়নি। দেহ খুঁজে পাওয়ার পরেও প্রয়োজনীয় নথি পেতে হয়রান হতে হয়েছে। পরিবারের লোকজনের চোখ এখনও শুধু টিভির দিকেই। মৃত্যু নিয়ে কেউ কোনও কথা বলুক, চাইছেন না তাঁরা। |