|
অনিমাদেবী।
ফাইল চিত্র। |
খাদ্যনালীতে টিউমারের বায়োপসি করাতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। শুক্রবারই তাঁর ছুটি হওয়ার কথা ছিল।
‘ছুটি’ হল। কিন্তু বর্ধমান শহরে শাঁখারিপুকুর হাউসিং এস্টেটের বাড়িতে ফেরা হল না অনিমা সেন নিয়োগীর (৭২)।
দু’সপ্তাহ আগেই আমরি-তে তিন দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন অবিবাহিতা অনিমাদেবী। কিন্তু ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় বুধবার তাঁকে ফের অ্যানেক্স ভবনে ভর্তি করানো হয়। বৃদ্ধার ভাতৃবধু করবীদেবীর কথায়, “মেজদি কঠিন খাবার খেতে পারছিলেন না। শুধু তরল। শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুবই কমে যায়। এক ভর্তি হওয়ার পরে এক বোতল রক্ত দেওয়া হয়েছিল। এ দিন তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা ঠিক করি, বায়োপসি রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বর্ধমানে আনা হবে না।”
সে কারণেই এ দিন সকালে বাড়ির কেউ তাঁকে আনতে যাওয়ার কথা ভাবেননি। করবীদেবীর কথায়, “বাড়িতে এলে অনিয়ম হতে পারে ভেবে আমরা ওঁকে আর ক’দিন রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করব ভেবেছিলাম।” কিন্তু সেই সকালেই কলকাতা রওনা দিতে হল অনিমাদেবীর ছোটভাই প্রদীপবাবুকে। তত ক্ষণে টিভি চ্যানেলে সকলে জেনে গিয়েছে অগ্নিকাণ্ডের খবর। কলকাতায় টেলিফোন করে তাঁরা জেনে গিয়েছেন, দিদি আর নেই।
তার পর থেকেই শাঁখারিপুকুর শোকস্তব্ধ। বর্ধমানে সেটেলমেন্ট অফিসের পেশকারের পদে চাকরি করার সুবাদে অনিমাদেবীকে এলাকায় প্রায় সকলেই চিনতেন। ১৯৭৮ সালে এই হাউসিং তৈরি হওয়ার ইস্তক তিনি ছিলেন ‘কিউ- ৪’ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। আবাসিক রাজীব চৌধুরী, আশিস সেনগুপ্তদের পাশাপাশি ভাতছালার বাসিন্দা দিব্যেন্দু দুবেও বলেন, “জ্ঞান হওয়া থেকেই আমরা ওঁকে দেখছি। দারুন মিশুকে ছিলেন। সকলের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে অসুস্থ শরীরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন।” |
এ ছাড়া ছিল সেলাই। স্থানীয় অনেক কিশোরী, তরুণী, গৃহবধূ তাঁর কাছে নানা ধরনের সেলাই শিখতে আসতেন। তাঁদের ‘অনিমাদি’ও হাসিমুখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেখাতেন। এ ছাড়া, এর তার আপদে-বিপদে এগিয়ে যাওয়া তো আছেই। তাঁর সেলাইয়ের মতো জনপ্রিয় ছিলেন তিনি নিজেও। সন্ধ্যায় যখন অনিমাদেবীর দেহ এস্টেটে ফেরে, গোটা পাড়া ভেঙে পড়েছে। রাতে নির্মল ঝিল শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। |