নিজস্ব সংবাদদাতা • অন্ডাল |
হাসপাতাল কেন কাচ দিয়ে মোড়া? ভেবে পাচ্ছেন না রুমা মাহান্তি।
স্বপন মাহান্তির (৪৬) ভ্রাতৃবধূ রুমা। বাড়ি অন্ডালের উখড়া মহন্তস্থলে। রানিগঞ্জে ইসিএলের রতিবাটি ওয়ার্কশপের কর্মী ছিলেন স্বপনবাবু। গত ১১ নভেম্বর মোটরবাইক নিয়ে বীরভূমের দেবগ্রামে যাওয়ার সময়ে গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হন। শিরদাঁড়ার তিনটি হাড় টুকরো হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। দু’দিন পরেই দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ২৬ নভেম্বর সেখান থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু দুর্গাপুর থেকে গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে ফের তাঁর ব্যথা শুরু হয়। বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে ইসিএলের কাল্লা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্বপনবাবুকে। সেখান থেকে ৪ ডিসেম্বর আমরি-তে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। ৬ ডিসেম্বর শিরদাঁড়ায় অস্ত্রোপচার হয়। চারতলায় ২৩০৫ নম্বর শয্যায় ভর্তি ছিলেন তিনি।
স্বপনবাবুর ছেলে অভি এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে, মেয়ে পিউ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্ত্রী কৃষ্ণা অসুস্থ। রাত পর্যন্ত তাঁদের দুঃসংবাদ দেওয়া যায়নি। সে কারণে তাঁরা কেউই কলকাতায় আসেনি। স্বপনবাবুরা পাঁচ ভাই। তিনিই বড়। পাইকপাড়ায় পিসির বাড়িতে থেকে চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছিলেন সেজো ভাই প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রী রুমা। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদই দুঃসংবাদ পেয়েছিলেন তাঁরা। ছোট ভাই পাপ্পু উখড়া থেকে ফোনে জানান, আমরি-তে আগুন লেগেছে। গাড়ি ধরে সকাল ৬টার মধ্যেই প্রদীপবাবুরা পৌঁছে যান।
ভিতরে ঢোকার পরে তাঁদেরই প্রাণসংশয় হওয়ার জোগাড়। রুমার কথায়, “কালো ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মৃতের তালিকায় বড়দার নাম ছিল না। আমরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করি।” কিছু ক্ষণ পরে আমরি-র তিনতলায় জরুরি বিভাগে তাঁরা স্বপনবাবুর মৃতদেহ খুঁজে পান। দুপুরে সেই দেহ এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয় ময়না-তদন্তের জন্য।
রুমা বলেন, “পুরো বাড়ি কাচ দিয়ে মোড়া। কাচ ভেঙে বেশ কিছু রোগীকে বেরিয়ে আসতে দেখি। কোনও হাসপাতালকে যেন এ ভাবে দুর্গ বানিয়া রাখা না হয়। খোলামেলা থাকলে হয় তো অনেকেই বেঁচে যেতেন।” |