বিয়ে হয়েছিল ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু বাপের বাড়ি যে কুলটির নিয়ামতপুরে।
কোমরে ব্যথা নিয়ে গত ২১ নভেম্বর আমরি-তে ভর্তি হয়েছিলেন বাণী শর্মা (৫২)। প্রায় সুস্থ হওয়ার মুখেই ছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে এনআইটিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিছু দিনের মধ্যে ছাড়াও পেতেন।
বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালেই ছিলেন বাণীদেবীর স্বামী, ধানবাদের বারওয়াড্ডার খনিকর্মী রামকৃষ্ণ শর্মা। তিনি বলেন, “বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ শেষ বারের মতো স্ত্রীকে জীবিত দেখেছি। তখনও জানতাম না, মধ্যরাতের বিভীষিকা আমাকে সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে।”
বীণাদেবীর সঙ্গে রামকৃষ্ণবাবুর বিয়ে হয় ১৯৮২ সালে। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে বারওয়াড্ডাতেই থাকে। কাজ সামলে প্রায়ই ধানবাদ থেকে চলে আসতেন রামকৃষ্ণবাবু। হাসপাতালের পাশেই লজে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিনি জানান, বহু দিন ধরেই কোমরের ব্যথায় ভুগছিলেন তাঁর স্ত্রী। রাঁচির একটি হাসপাতালে বেশ কয়েক বছর চিকিৎসাও হয়েছে। কিন্তু অবস্থা পাল্টায়নি। |
এর পরে খোঁজখবর নিয়ে রামকৃষ্ণবাবু শোনেন, আমরি-তে হাড়ের চিকিৎসা ভাল হয়। সে কারণেই সোজা চলে আসেন এখানে। সুফলও মিলছিল। দিন তিনেক আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথাও হয়েছে রামকৃষ্ণবাবুর। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, রোগীর অবস্থা এখন অনেক ভাল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিয়ে দেবেন।
রামকৃষ্ণবাবুর কথায়, “ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ মানুষজনের চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল। দরজা খুলে নীচে নেমে দেখি, হাসপাতালের চারিদিক কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। ভিতর থেকে বের করে আনা হচ্ছে অসুস্থ রোগীদের। চারিদিকে লঙ্কাকাণ্ড।” এই অবস্থায় খানিকটা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়েন তিনি। প্রথমটায় বুঝে উঠতে পারেননি, কী করা উচিত। সংবিত ফিরতেই ছুট লাগান।
লাভ হয়নি।
সকালে মেলে স্ত্রীর মৃতদেহ। রামকৃষ্ণবাবুই নিয়ামতপুরে ফোন করে বাণীদেবীর দাদা শিশির কর্মকারকে খবর দেন। বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ স্ত্রীর এসএসকেএম হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে স্ত্রীর দেহ মেলে। কলকাতা থেকে প্রৌঢ় রওনা দেন বাড়ির পথে। |