নিজস্ব সংবাদদাতা • পাণ্ডবেশ্বর |
|
ধর্মেশ্বর |
খবরটা কুমারডিহি গ্রামে পৌঁছেছিল সাতসকালেই।
দিন চারেক আগে পাণ্ডবেশ্বরের ওই গ্রামের বাড়ি থেকেই কলকাতায় আমরি-তে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন ধর্মেশ্বর সোমণ্ডল (৬১)। ছিলেন চারতলায় ২৪/৬৪ নম্বর শয্যায়। অগ্নিকাণ্ডে তিনি বাঁচেননি।
মোটে এক বছর আগে ইসিএল থেকে অবসর নিয়েছিলেন ধর্মেশ্বরবাবু। এর কিছু দিন পরেই তাঁর স্ট্রোক হয়। তখনও তিনি স্থানীয় উদয়ন বিদ্যানিকেতনের পরিচালন সমিতির সম্পাদক। অসুস্থতার কারণে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেন। গত ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাঁকে আমরি-তে ভর্তি করানো হয়।
কলকাতায় থেকে চিকিৎসা করানোর সুবিধা হয়েছিল ধর্মেশ্বরবাবুর ছোট ছেলে রাহুল টালিগঞ্জের কাছে পল্লিশ্রীতে থাকায়। কলকাতার একটি নামি নার্সিংহোমে তিনি প্যাথলজিস্টের কাজ করেন। বড় ছেলে রজতের গ্রামেই দোকান আছে। বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে মা শেফালি দেবীকে নিয়ে তিনি ভাইয়ের কাছেই উঠেছিলেন।
রাহুলবাবু জানান, শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ তাঁরা আগুন লাগার খবর পেয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু তত ক্ষণে পুলিশ রাস্তা আটকে দিয়েছে। ভিড় ঠেলে হাসপাতালে পৌঁছতে তাঁদের বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়। সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ হাসপাতালের কাছে পৌঁছেও তাঁরা ভিতরে ঢুকতে পারেননি। পুলিশ, দমকলে এলাকা ছয়লাপ। |
ঘণ্টাখানেক বাদে ভিতর থেকে মৃতদেহ বের করা শুরু হয়। সার সার দেহের মধ্যে বাবাকে খুঁজে পান দুই ছেলে। এর পরেই তাঁরা ফোনে গ্রামের বাড়িতে খবর দেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে ধর্মেশ্বরবাবু ছিলেন তৃতীয়। বাকি সকলেই এখনও জীবিত। খবর পেয়েই এক ভাই সুবোধবাবু ও তাঁর ছেলে রাজু কয়েক জন প্রতিবেশীকে কলকাতার দিকে রওনা দেন। এর মধ্যে ধর্মেশ্বরবাবুর বন্ধু, পাণ্ডবেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য বালিচাঁদ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন।
বালিচাঁদবাবুর আক্ষেপ, “৩৮ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। ও এক সময়ে ভাল ফুটবল খেলত। যে কোনও ধরনের সমাজসেবামূলক কাজে ছুটে যেত। তাকে এই ভাবে চলে যেতে হল!” স্থানীয় নবগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান উদয় রুইদাস বলেন, “ওঁর মতো ভালমানুষের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। পুরো এলাকা শোকস্তব্ধ।” তৃণমূলের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীও বলেন, “উনি আমাদের দল করতেন না। কিন্তু এককথায় ভাল মানুষ ছিলেন।” দুপুর ২টো নাগাদ আমরি থেকে দেহ পাঠানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেই ময়না-তদন্ত হয়। গ্রামের বাড়িতে বসে ধর্মেশ্বরবাবুর বড়দা শৈলেশ্বর সোমণ্ডল বলেন, “যাদের অপরাধে আমরা ওকে হারালাম, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” |