নিজস্ব সংবাদদাতা • বারাবনি |
|
প্রশান্ত ঘোষ।
নিজস্ব চিত্র। |
ভেবেছিলেন, ছেলেকে সুস্থ করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন।
তার বদলে ছেলের যে এ রকম মর্মান্তিক মৃত্যু হবে, স্বপ্নেও ভাবেননি গৌরান্ডির বড়ডাঙার মানিক ঘোষ। শুক্রবার সকালে খবরটা জানার পরে অনেক কষ্টে কান্না ভেজা কাঁপা গলায় যেটুকু বলতে পেরেছেন, তার বেশির ভাগটাই অস্পষ্ট।
ছেলে প্রশান্ত ঘোষের (৩৫) হয়েছিল মোটরবাইক দুর্ঘটনা। গত ২৯ অক্টোবর রাস্তার গর্তে ঝাঁকুনিতে ছিটকে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে। সেখানে কিছু দিন চিকিৎসার পরে আমরি-তে। ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছিলেন। কয়েক দিন আগেই তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে আনা হয়েছিল। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে বাড়িও ফিরে আসতেন।
মামার দেখভালের জন্য বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে ছিলেন প্রশান্তবাবুর ভাগ্নে সুহাস মাঝি। তিনিই প্রথম টেলিফোনে দুঃসংবাদটা বারবানিতে গৌরান্ডির বাড়িতে দেন। সুহাসবাবু জানান, রাতে অন্য রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে হাসপাতালের নীচে বসেছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখেন, বেসমেন্টের পিছনের অংশ থেকে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। ধোঁয়া ক্রমশ বাড়তে থাকে। শুরু হয় ছোটাছুটি।
তখন তারস্বরে চিৎকার করছেন আশপাশের লোকজন। এই অবস্থায় কেটে গিয়েছে বহুক্ষণ। সুহাসবাবু বলেন, “প্রথম দিকে যাঁদের উদ্ধার করা হল, সম্ভবত তাঁরাই বাঁচলেন। পরের দিকে যাঁদের বের করা হয়েছে তাঁরা আর কেউ বেঁচে নেই। পরে দেখলাম, মামার নিথর দেহটাও শোয়ানো আছে হাসপাতাল চত্বরে।” |
এ দিন দুপুরে বড়ডাঙার বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই শোনা যায় মহিলাদের বিলাপ। স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়া ইস্তক পাগলের মতো মাটিতে আছাড় খাচ্ছেন আলোচনা ঘোষ। প্রতিবেশী মহিলারা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ভিতরের ঘরে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন বৃদ্ধা মা। বাইরেরে উঠানে চিৎকার করে কাঁদছেন প্রশান্তবাবুর তিন মেয়ে বৈশাখী, বর্ষা ও বৃষ্টি। বড় মেয়ে বৈশাখী স্থানীয় একটি হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বাকি দু’জন প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া।
মৃতের ভাইপো ফাল্গুনী ঘোষ বলেন, “গত প্রায় দেড় মাস ধরে চিকিৎসা হচ্ছিল কাকার। তার যা পরিণতি হল, মেনে নেওয়া কঠিন।” |