নিজস্ব সংবাদদাতা • চিত্তরঞ্জন |
সিঁড়ি দিয়ে ছুটে ওঠার চেষ্টা করছিলেন রূপনারায়ণপুরের প্রশান্ত পণ্ডিত।
তত ক্ষণে তাঁরা বুঝে গিয়েছেন, আগুন লেগেছে। পাঁচতলায় ভর্তি তাঁর বাবা। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা নাছোড়।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সমস্যা নিয়ে ২৬ নভেম্বর ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানার ঠিকাদার জ্যোতিষচন্দ্র পণ্ডিত (৬০)। টানা চিকিৎসায় সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন অনেকটা। দু’এক দিনের মধ্যেই তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়ার কথা ছিল।
জ্যোতিষবাবুর মেজো ছেলে সমরকুমার পণ্ডিত জানান, শুক্রবার সকালে বড়দা প্রশান্তের কাছ থেকেই তাঁরা প্রথম আগুন লাগার খবর পান। তাঁর কথায়, “একটুও দেরি না করে সোজা কলকাতায় ছুটেছি। তখনও বুঝিনি, কী ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। বেলার দিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেখি, উঠোনে সার সার দেহ শোওয়ানো রয়েছে।”
দেরি আসলে অনেকটাই হয়ে গিয়েছিল। মাঝরাতেই প্রশান্তেরা বুঝেছিলেন বিপদটা। তিনি যে রাত জাগছিলেন একতলায়।
প্রশান্ত জানান, রাত সওয়া ২টো নাগাদ এক রোগীর আত্মীয় বাইরে গিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম বেসমেন্ট থেকে অল্প ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। কিন্তু প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। একটু পরেই তাঁরা পোড়া গন্ধ পান। বাইরে বেরিয়ে অবস্থা বুঝতে আরও মিনিট ১৫ পেরিয়ে যায়। তত ক্ষণে ধোঁয়াও বাড়তে শুরু করেছে। বেগতিক বুঝে তাঁরা চিৎকার শুরু করেন। তাতে আশপাশের বস্তির লোকজন ছুটে আসেন।
প্রশান্তের কথায়, “আমরা বারবার হাসপাতালের কর্মীদের অনুরোধ করতে থাকি, ‘উপরে উঠতে দিন।’ কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা আমাদের বাধা দেন। বলতে থাকেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীদের কোনও ক্ষতি হবে না।’ কিন্তু পরে ওরা কিছুই করে উঠতে পারেনি। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে আমাদের ধাক্কাধাক্কিও হয়।”
ভোর পৌনে ৪টে নাগাদ পুলিশ এসে পৌঁছয়। এর পরেই রোগীর বাড়ির লোকেদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একটু পরে আসে দমকল। তত ক্ষণে গেট ছেড়ে নিরাপত্তারক্ষী ও হাসপাতালের কর্মীরা পালিয়ে গিয়েছেন। চার-পাঁচ তলায় চলে গিয়েছে ধোঁয়া। ভোর ৪টে ২০ নাগাদ চারতলা থেকে দু’জনকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়। প্রশান্তেরা দমকলের সঙ্গে উদ্ধারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচতলা থেকে জ্যোতিষবাবুকে নামিয়ে আনতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার রাতে শেষ বার বাবাকে দেখেছেন প্রশান্ত। তাঁর মনে পড়ে, “বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বাবা নিজের হাতে গ্লাস ধরে দুধ খেয়েছেন। সামান্য কথাও বলেছেন। তখনও কল্পনা করিনি, এমনটা ঘটতে পারে।” বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাঁর মা সুমিত্রীদেবীও। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ স্বামীকে সামান্য তরল খাবারও খাইয়ে আসেন। রাত পর্যন্ত তাঁকে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানাতে পারেননি ছেলেরা। |