|
|
|
|
গরু-মোষ পাচার নিয়ে উত্তরবঙ্গের দুই প্রান্তে ভাঙচুর, পথ অবরোধ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি ও কোচবিহার |
গরু-মোষ পাচারের অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকালের মধ্যে উত্তরবঙ্গের দুই প্রান্তে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। বুধবার সকালের দিকে শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি ও পরে কোচবিহারের দিনহাটা থানার ওকরাবাড়িতে একই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, নকশালবাড়িতে সিনেমা হলের সামনে থেকে এসএসবি জওয়ানেরা আটক ৪টে মোষ ছাউনিতে নিয়ে যাওয়ার পথে তোতারাম এলাকার একদল গ্রামবাসী সেগুলি ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ। জওয়ানদের সঙ্গে থাকা একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। জওয়ানদের অন্য একটি দল নকশালবাড়ি বিডিও অফিসের সামনে থেকে দু’টি গরু-সহ পিকআপ ভ্যান, চালক ও খালাসিকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এর পাল্টা হিসেবে গ্রামবাসীরা পানিঘাটা মোড়ে এসএসবি’র অন্য একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। তার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিনহাটা থানার ওকরাবাড়িতে গরু পাচারে আপত্তি জানানোয় দুষ্কৃতীরা এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষককে বাস থেকে নামিয়ে বেধড়ক পেটায় বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। |
|
পাচারের অভিযোগে এসএসবি জওয়ানরা গরু ও মোষ আটকের
পরে নকশালবাড়িতে বাসিন্দাদের পথ অবরোধ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
এ দিন নকশালবাড়িতে আটক চালক ও খালাসির মুক্তির দাবিতে সকাল ৯টা থেকে থানার সামনে জনতা রাস্তা অবরোধ করে। সেই সময়ে পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। বেলা ১১টা থেকে সাতভাইয়া এলাকায় অবরোধ করা হয় ৩১ সি জাতীয় সড়কও। খবর পেয়ে পুলিশ আধিকারিকেরা নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অমর সিংহ, সুনীল ঘোষের মধ্যস্থতায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় আটক গরু, চালক ও খালাসিকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১টা নাগাদ পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “এসএসবি’র বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি মামলা হয়েছে। পাশাপাশি, পুলিশ ও এসএসবি’র গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ব্যবসায়ীরা গ্রামবাসীদের উস্কে দিয়েছেন কি না, তাও পুলিশের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসএসবি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আটক মোষ এবং গরু নেপালে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। সেই কারণে তাঁরা সেগুলি আটক করেছেন। অন্য দিকে, বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, মঙ্গলবার হাট থেকে কিনে ওই সমস্ত গরু-মোষ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার নকশালবাড়িতে গরু কেনাবেচার হাট ছিল। নেপাল সীমান্ত এলাকায় সেগুলি আটক না-করে এসএসবি জওয়ানেরা নকশালবাড়ি বাজারে কেন আটক করলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।
দিনহাটা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতীদের হাতে নিগৃহীত ওই শিক্ষকের নাম শ্যামল মোদক। তাঁর বাড়ি দিনহাটার কালমাটি সীমান্ত এলাকায়। তিনি গীতালদহের পশ্চিম ভোগরাম প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বাসে চড়ে স্কুল থেকে দিনহাটায় ফিরছিলেন। সেই সময়ে কয়েকজন দুষ্কৃতী শ্যামলবাবুকে পাঁজাকোলা করে বাস থেকে নামিয়ে মোটর সাইকেলে বসিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ পরে তাঁকে উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, কালমাটি সীমান্ত গ্রামে ওই শিক্ষকের বাড়ির উঠোনের উপর দিয়েই কিছু দুষ্কৃতী রাতে গরু পাচার করে। তাতে আপত্তি জানিয়েছিলেন ওই শিক্ষক।
তার পরেই ওই দুষ্কৃতী চক্রের এক জনকে গ্রামবাসীরা মারধর করেন। বিএসএফ জওয়ানরাও কিছু গরু আটক করে। তার জেরে দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য হন ওই শিক্ষক। তিনি বলেন, “আমার বাড়ির উঠোন দিয়ে গরু পাচারে আপত্তি করার জেরে এ ভাবে টার্গেট হয়ে যাব সেটা ভাবিনি।” কোচবিহারের ডিএসপি মহাদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গরু পাচারে আপত্তি জানানোকে কেন্দ্র করেই মারধরের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” |
|
|
|
|
|