ওঁরা সবাই জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন।
বয়স ষাট পেরিয়েছে। ক’দিন আগেও কোমর আর হাঁটুর ব্যথায় বিছানা ছেড়ে উঠতে পারতেন না ওঁদের কেউ কেউ। কিন্তু বুধবার বিকেলে মধ্য কলকাতার এক হোটেলে র্যাম্পের আদলে তৈরি মঞ্চে হাঁটলেন ওঁরাই। অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লেগেছে। নড়বড়ে পা সামলে নিয়ে তার পরে তারিয়ে তারিয়ে অনুভব করেছেন জীবনে দ্বিতীয় বার হাঁটতে শেখার আনন্দ। |
সংখ্যাটা কম নয় ২৬ জন। বাইপাস-সংলগ্ন একটি হাসপাতালে কারও হাঁটু, কারও হিপবোন প্রতিস্থাপন হয়েছে। জটিল ওই অস্ত্রোপচার যে সফল, তা বোঝাতেই ওঁদের র্যাম্পে হাঁটা। সাদা-কালো কলকা শাড়িতে সত্তর ছুঁই-ছুঁই ইন্দ্রাণী গুপ্তু যেমন সোজা হয়ে হেঁটে গেলেন পুরোটা। একগাল হেসে বললেন, “হাঁটুর ব্যথায় দুলে দুলে হাঁটতাম। সবাই বলত পেঙ্গুইন। তাঁদের বলব, পেঙ্গুইন দেখতে হলে টিভিতে দেখো। আমার সঙ্গে এখন আর জীবিত বা মৃত কোনও পেঙ্গুইনেরই মিল নেই।”
সুস্থ ভাবে হাঁটার আনন্দে বলামাত্রই ‘মাইকেল জ্যাকসন পোজ’ বছর পঁয়ষট্টির আলপনা সেনের। পঁয়ষট্টি পেরোনো রুবি পুরকায়েত চিকিৎসকদের উদ্দেশে গেয়ে উঠলেন। র্যাম্পে ওঠার আনন্দে উজ্জ্বল মুখে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অশোককুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাক! ফের লেকে হাঁটব। বেড়াতেও যাব।”
অস্থিচিকিৎসকেরা জানান, এ রাজ্যে বছরে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মানুষের ‘জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট’ হয়। এঁদের গড় বয়স ৫৫ বছরের উপরে। মহিলারা সংখ্যায় বেশি। শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় হাঁটুর প্রতিস্থাপন হয় বেশি। খরচ ১,৮৫,০০০ টাকার মতো। অস্ত্রোপচারের পর দিন থেকে হাঁটতে পারেন রোগীরা।
কিন্তু হাঁটু বা হিপবোন প্রতিস্থাপন কি ঠেকানো যায় না? চিকিৎসক দেবাশিস চক্রবর্তী বললেন, “সমস্যা এড়াতে ছোটবেলা থেকে দুধ, ডিম বা পেয়ারার মতো লৌহ-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, রোজ কিছুটা হাঁটা, শারীরিক পরিশ্রম করা ও ওজন কমানো জরুরি। সাইকেল চালানো, রোয়িং বা সাঁতারও খুব উপকারী।” চিকিৎসক রণেন সেনের মতে, যাঁদের পরিবারে অস্থিসন্ধি ক্ষয়ের ধাত আছে বা ইতিমধ্যে জয়েন্টের ব্যথা শুরু হয়েছে, তাঁদের কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে। শৌচাগারে কমোড ব্যবহার করতে হবে। সিঁড়ি ভাঙা বা হাঁটু মুড়ে বসে কোনও কাজ না করাই ভাল।
অনুষ্ঠানে ষাটোর্ধ্ব অংশগ্রহণকারীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রসেনজিৎ এবং মডেল জেসিকা গোমস। |