কোমায় মেডিক্যাল/৪
কর্মী নেই, অভিযোগ সরকারি উদাসীনতার
প্রশাসনিক পদ থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী--সব ক্ষেত্রেই লোকাভাব মেদিনীপুর মেডিক্যালে।
২০০৪ সালে মেদিনীপুর সদর হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত হয়। কার্যত উলম্ফন। কিন্তু কর্মীর সংখ্যা বিশেষ বাড়ানো হয়নি। তার পর থেকে কর্মী চেয়ে বার বার সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, যা কর্মী প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম পদ মঞ্জুর করেছে রাজ্য সরকার। আবার সেই পদও পূরণ করেনি। বেশিরভাগই শূন্য। হাসপাতাল সুপার রামনারায়ণ মাইতির কথায়, “কর্মী না থাকলে সব দিক ঠিক রেখে এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল চালানো খুবই কঠিন। শূন্যপদের তালিকা বার বার রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। শূন্যপদ পূরণ না করা গেলে কাজ করা দিন দিন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
কী কী নেই? সচিব নেই। সুপার রয়েছেন। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাঁর পিএ নেই। নেই ডায়েটেশিয়ান। ৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের মধ্যে ২টি পদ শূন্য। ১০ জন ওয়ার্ড-মাস্টার থাকার কথা, ৪টি পদ শূন্য। ১৯ জন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ানের অনুমোদিত পদের মধ্যে ১০টিই শূন্য! ৭ জন ইসিজি টেকনিশিয়ানের অনুমোদিত পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য। ৩টি হেড-ক্লার্কের পদই শূন্য! ২১ জন লোয়ার ডিভিসন ক্লার্কের অনুমোদিত পদের মধ্যে ১৪টি শূন্য। ১৪টি আপার ডিভিসন ক্লার্কের পদের মধ্যে ১০টি শূন্য। ৬ জন স্টোর-কিপারের মধ্যে ৪ জন নেই। ক্রিটিক্যাল কেয়ার টেকনোলজির ৪টি পদই শূন্য। ২ জন ডেটা-এন্ট্রি অপারেটর থাকার কথা, এক জনও নেই। গ্রুপ-ডি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন ২০০ জন। সরকার ১৮৭টি পদ মঞ্জুর করে। তার পরেও ৯৮টি পদই শূন্য! ২০০ জন সুইপার দাবি করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাত্র ৬৭টি পদ মঞ্জুর হয়। তার মধ্যেও ২২টি পদই শূন্য। ফলে হাসপাতালে যত্রতত্র নোংরা পড়ে থাকে। বিকেল ৩টে-র পর বন্ধ হয়ে যায় প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি। বেশিরভাগ সময়ে জরুরি প্রয়োজনেও এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষার মতো ছোটখাটো কাজও হয় না। এমনকী জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য পাওয়া যায় না ট্রলিও। রোগীর আত্মীয়রাই রোগীকে নিয়ে যেতে চাইলেও সন্ধের পর আর ট্রলি পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রেই ট্রলির জন্য টাকাও দাবি করা হয়।
অসংখ্য চিকিৎসকের পদও শূন্য। ৭৬টি মেডিক্যাল অফিসারের পদ অনুমোদিত। ২৫টি শূন্য। যে কয়েক জন চিকিৎসক আছেন তাঁদের বেশিরভাগ কলকাতা থেকে আসেন। নিয়মিত থাকেন না। সপ্তাহে দু’দিন বা তিন দিন থাকেন। ফলে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চাপ বাড়ে। গুরুত্বপূর্ণ কাজেও জুনিয়ার ডাক্তারদের উপরেই ভরসা করতে হয় রোগীদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, এক-এক জনের উপরে একাধিক দায়িত্ব চাপলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে! এর উপর কর্মরত চিকিৎসকদের হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই গরহাজিরা সমস্যা বাড়ায় বলে স্বীকার করে নিয়েছেন সুপার। তবে তাঁর আশ্বাস, “চিকিৎসকরা যাতে হাসপাতালে বেশি সময় দেন, সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই হাসপাতালের উপরে নজর দিয়েছিলেন। সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিলেন, এ বার বুঝি সরকারি হাসপাতালের হাল ফিরবে। কিন্তু হাসপাতালের দিকে রাজ্য সরকার একটু নজর এড়ালেই ফের আগের সেই নড়বড়ে অবস্থাই ফিরে আসবে বলে অনেকেরই আশঙ্কা। ঠিক যেমনটা চলে আসছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তা হলে কি মেডিক্যালের হাল বদলাবে না? কর্তৃপক্ষের কথায়, “আমরা সব সময়ে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যে কারণে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকারকে জানানোও হয়েছে। পরিকাঠামো শুধরোলে পরিষেবার মানও ফিরবে।”

(শেষ)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.