সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি পৃথক বোর্ড গড়ছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় তার অনুমোদনও মিলেছে।
রাজ্য সরকার মনে করছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসক নিয়োগে সমস্যা থাকে, ফলে সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা ধাক্কা খায়। নতুন বোর্ডের মাধ্যমে সমস্যাটির সুরাহা হতে পারে বলে সরকারের আশা। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বুধবার বলেন, “নিয়োগের চলতি প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকায় বহু হাসপাতালে চিকিৎসক আনা যাচ্ছে না। পদ্ধতিটির সরলীকরণের জন্য রাজ্য সরকার একটা বোর্ড তৈরি করছে, যার মাধ্যমে সরাসরি চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে।” এ দিনই বিধানসভায় শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে চার হাজারেরও বেশি চিকিৎসক সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন। এবং তাঁর পেশ করা তথ্যটি থেকে যে প্রশ্ন সামনে এসেছে, তা হল: নিয়োগের বোর্ড তৈরি করলেই কি ডাক্তারের ঘাটতি মিটবে?
মন্ত্রীর যুক্তি, “চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন কম থাকলেও চিকিৎসকেরা কাজে যোগ দেন। তা হলে সরাসরি সরকারি চাকরিতে তাঁরা আসবেন না কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরী অবশ্য খানিকটা ভিন্নমত। অধিকর্তার বক্তব্য, তাঁরা নিয়োগ করতে হাত বাড়িয়ে থাকলেও ডাক্তারেরা কাজে যোগ দিচ্ছেন না। প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রও বলেছেন, তাঁরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কাছে নাম চেয়েও পেতেন না। যত নাম আসত, তার খুব কমই কাজে যোগ দিতেন।
সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসক নিয়োগ করা যাচ্ছে না কেন? শ্রমমন্ত্রী বলেন, “পদ্ধতিগত কারণে দেরি হচ্ছে। কারও অবসরের দু’-তিন বছর আগেই তাঁর জায়গায় লোক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত।” চালু পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “শূন্য পদের সংখ্যা দিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত এজেন্সিকে তথ্য পাঠাতে হয়। পদগুলোর জন্য অর্থ দফতর ও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হয়। তার পরে অনুমোদিত পদে নিয়োগের জন্য সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়।” স্বাস্থ্য-অধিকর্তার মতে, “পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘ।”
কিন্তু গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারের এত অভাব। তা সত্ত্বেও সরকারি চাকরিপ্রার্থীর তালিকায় চার হাজার চিকিৎসক! এটা বিস্ময়কর নয় কি?
প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যবাবু বলেন, “সরকারি চাকরি চাইছেন যাঁরা, তাঁরা কোন ধরনের চিকিৎসক, শ্রমমন্ত্রী তাঁর হিসেবে সেটা স্পষ্ট করেননি।” সূর্যবাবু এ-ও বলেন, “চিকিৎসকের অভাব রয়েছে, তা ঠিক। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা হল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে যত নামই আসুক, তার মধ্যে ২০%-২৫% বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ৫০% এমবিবিএস কাজে যোগ দেন।”
এ প্রসঙ্গে এ দিন বিধানসভায় কোনও মন্তব্য না-করলেও চিকিৎসকের অভাব মেটাতে তাঁরা কী করেছেন, সূর্যকান্তবাবু পরে তার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, “আমরা অস্থায়ী ও চুক্তির ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ শুরু করেছি। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউও করছিলাম।” পাশাপাশি বাম সরকার জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ গড়ে আরও চিকিৎসক তৈরির চেষ্টা করেছিল বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। |