‘বেনজির’ সাক্ষাতে সেবার আহ্বান
মিলবে সব সুযোগ, ডাক্তারদের আশ্বাস মমতার
চ্চতর গবেষণা বা পঠন-পাঠনের জন্য চিকিৎসকদের যাতে রাজ্য ছেড়ে যেতে না-হয়, সে জন্য পশ্চিমবঙ্গেই উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের উদ্দেশে সরাসরি তাঁর আহ্বান, ‘‘হাসিমুখে পরিষেবা দিন। সরকারও আপনাদের হাসিমুখ বজায় রাখার চেষ্টা চালাবে।”
বুধবার টাউন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত মেডিক্যাল অফিসার ও নার্সদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি চাকরিতে যোগদানের প্রাক্কালে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের এমন দৃষ্টান্ত এ রাজ্যে প্রায় নেই। আর সেই ‘বেনজির’ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ হেন আশ্বাসবাণী শুনে শ্রোতারা স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত। বস্তুত মমতার এক-একটা কথায় হাততালিতে ফেটে পড়েছে প্রেক্ষাগৃহ। কী বললেন তিনি?
চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘ভেদাভেদ’ না-রেখে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে এত দিন নিরপেক্ষ পরিবেশ ছিল না। আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করতে সব কিছু ঢেলে সাজাচ্ছি। আপনারা সেবার মানসিকতা নিয়ে সকলের পাশে দাঁড়ান। মনে রাখবেন, অসুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মতো বড় কাজ আর কিছু নেই।” তাঁর আক্ষেপ, “এ রাজ্যে অপুষ্টির কারণে বহু শিশু মারা যাচ্ছে। দারিদ্র্য ও সচেতনতার অভাবে প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হচ্ছে না।” এর অবসানে নবীন চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
টাউন হলে নবনিযুক্ত ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
পশ্চিমবঙ্গের একটা বড় সমস্যা হল, ফি বছর এখানে যত চিকিৎসক তৈরি হচ্ছেন, তার একটা বড় অংশই অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। কিংবা বেশি টাকার হাতছানিতে বেসরকারি হাসপাতালে যোগ দিচ্ছেন। এই সঙ্কটের কথা মেনে নিয়েই মমতার মন্তব্য, “আমরা ওদের সঙ্গে টাকার পাল্লা দিতে পারব না। সবাই কি বাসমতী চাল খেতে পারে? মনে রাখবেন, মোটা চালেও খাদ্যগুণ থাকে।” শ্রোতাদের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান, “লোভের হাতছানি যতই থাক, শপথ নিন, নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।” বক্তৃতার ফাঁকে ছুড়ে দেন প্রশ্নও “অন্য জায়গায় চলে যাবেন না তো? এখানেই থাকবেন তো?” সমস্বরে জবাব আসে, “থাকব।”
কিন্তু চিকিৎসক ধরে রাখতে যে সব সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার, এ রাজ্যে তার সম্যক অভাবের কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই অভাব দূর করার প্রতিশ্রুতি তিনি যেমন দিয়েছেন, তেমন বলেছেন, “আমাদের মেধা ব্যবহার করে অন্য দেশ এগিয়ে যাচ্ছে! আর পরিকাঠামোর অভাব আছে বলে নিজের দেশকে আমরা বঞ্চিত করব? এমন ভুল করবেন না।”
চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে এ দিন ফের বলেছেন মেডিক্যাল-পড়ুয়াদের আসন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা। ৫০ হাজার নার্স তৈরির আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে আরও নার্সিং স্কুল ও নার্সিং কলেজ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। অন্য দিকে স্বাস্থ্য-কর্তারা জানান, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রায় দেড় হাজার চিকিৎসকের পদ ফাঁকা। তার কিছুটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন মারফত পূরণ হয়েছে। নিয়োগের একটা প্যানেলও তৈরি হয়েছে।
এবং এ দিন সেই প্যানেল থেকেই ৩০৪ জন ‘জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার’ এবং ১৪৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ডাকা হয়েছিল। অস্থায়ী ভিত্তিতে এঁদের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগ করা হবে। এসেছিলেন অন্তত সাড়ে পাঁচশো নার্সও। এঁদের কাজে লাগানো হবে বিভিন্ন সাব-সেন্টারে। স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র জানান, দশ-পনেরো দিনের মধ্যে ডাক্তার-নার্সরা নিয়োগপত্র পেয়ে যাবেন। ওঁদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সহাস্য মন্তব্য, “পুজোর আগে মায়ের জন্য শাড়ি কিনে নিয়ে যান।”
পাশাপাশি নবনিযুক্ত চিকিৎসক-নার্সদের নিজ নিজ দায়িত্বের কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, “রোগীকে অন্যত্র রেফার করতে হলে স্যালাইন, অক্সিজেন দিয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় এনে তবেই পাঠান। নচেৎ পথেই তার মৃত্যু হতে পারে।” তিনি ওঁদের এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বহু ক্ষেত্রে ডাক্তার বা নার্সের সামান্য ভুলে রোগীর জীবনসংশয় হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “অনেক সময়ে অ্যালার্জি টেস্ট না-করেই ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এই সব দিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
“ভাবছেন, এত কথা আমি কী করে জানলাম?” শ্রোতাদের প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। রসিকতার সুরে উত্তরটাও নিজেই দেন “আপনারা আমার সঙ্গে পেরে উঠবেন না। আমি ‘বেসিক’টা জানি। অনেক বার মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি তো! জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই চিকিৎসার ব্যাপারটা জেনেছি, বুঝেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.