|
|
|
|
ভাঁড়ারে ১০০ কোটি, মিড-ডে মিল পায়নি ৩০ লক্ষ |
অজয় বিশ্বাস • কলকাতা |
দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য মিড-ডে মিল বা দুপুরের খাবার প্রকল্প চালু করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু চলতি ব্যবস্থাতেই পশ্চিমবঙ্গে যাদের ওই খাবার পাওয়ার কথা, তাদের মধ্যে ৩০ লক্ষ স্কুলপড়ুয়ার পাতে এখনও মিড-ডে মিল পৌঁছয়নি। অথচ এই খাতে টাকার জোগানে কমতি নেই। বস্তুত, মিড-ডে মিল প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় ১০০ কোটি খরচই করতে পারেনি রাজ্য।
এই অবস্থায় চলতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই রাজ্যের সব স্কুলপড়ুয়াকে মিড-ডে মিলের আওতায় আনা হবে বলে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তাই জুলাইয়ের সময়সীমা পিছিয়ে ৩১ অগস্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ হাতে আছে আর মাত্র ১০ দিন। তার মধ্যে রাজ্য জুড়ে সব স্কুলপড়ুয়ার জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা যাবে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের অনেক কর্তাই এ নিয়ে আশাবাদী নন।
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের মিড-ডে মিল সংক্রান্ত রিভিউ মিশনের কাছে পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১০-’১১ সালে ওই খাতে রাজ্যের জন্য মোট ৪৩৮ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ৯৮ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা খরচই হয়নি। বরাদ্দ টাকা খরচ করা যাচ্ছে না কেন? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজ্যে মিড-ডে মিল প্রকল্পের অধিকর্তা নরেন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, “অনেক সময়েই আর্থিক বছরের শেষে টাকা হাতে আসে। তাই তা আর খরচ করে ওঠা সম্ভব হয় না। এই ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। ওই টাকা আমরা পরের বছরের গোড়ায় বরাদ্দ আসার আগে খরচ করে থাকি।”
জেলাগুলিতে বহু স্কুলে মিড-ডে মিল চালু হলেও এখনও সব স্কুলকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা যায়নি। আর খাস কলকাতাতেই ১১৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০০টির পড়ুয়ারা এখনও দুপুরের খাবার থেকে বঞ্চিত। হাতিবাগান থেকে বড়বাজার; শিয়ালদহ, কলেজ স্ট্রিট থেকে গার্ডেনরিচ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ওই ৫০০ প্রাথমিক স্কুলের ৮০ হাজার পড়ুয়াকে এখনও মিড-ডে প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কেন?
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন জানান, কলকাতার ঘিঞ্জি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে চলা স্কুলে রান্না করা সম্ভব নয়। তাই অন্য কয়েকটি রাজ্যে এই প্রকল্প চালানোর অভিজ্ঞতা থাকায় মাস ছয়েক আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব আসে। বিক্রমবাবু বলেন, “ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি অর্থ দফতরের অনুমোদনও পেয়ে গিয়েছে। এখন তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায়।”
ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মুখপাত্র ইনা বসু বলেন, “মিড-ডে মিল রান্না করা এবং সরবরাহের দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হচ্ছে, এমন ইঙ্গিত পেয়ে আধুনিক রান্নাঘরের জন্য বানতলায় জমি দেখা হয়েছে। কিন্তু তার পরে সবই চুপচাপ।”
রিভিউ মিশনের রিপোর্টে অবশ্য কলকাতায় মিড-ডে মিল রান্নার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কর্মসংস্থানের প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরবরাহ করা চালের মান অত্যন্ত খারাপ। রান্নাঘরে আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও ভাল নয়। |
|
|
|
|
|