|
|
|
|
রায় যাবে মন্ত্রীর কাছে |
মামলার গেরোয় শিক্ষা দফতর ব্যয় বাড়াচ্ছে সরকারের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ইচ্ছাকৃত ভাবে মামলা দীর্ঘায়িত করে সরকারের ঘাড়ে বিরাট অঙ্কের বোঝা চাপাচ্ছে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর। হাইকোর্ট এই মর্মে রায় দিয়ে বলেছে, যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে আর্থিক অনটনের সময় সরকারের বহু টাকা বাঁচানো যায়।
কর্মরত অবস্থায় মৃত এক শিক্ষকের ছেলের চাকরি সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে বুধবার এ কথা বলেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমিত তালুকদার ও বিচারপতি প্রভাত দে-র ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টে স্কুলশিক্ষা অধিকর্তার উপস্থিতিতেই ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে। বিচারপতি অমিত তালুকদার হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রায়ের প্রতিলিপি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। যাতে মন্ত্রী জানতে পারেন, তাঁর দফতরের পদস্থ কর্তারা কী ভাবে মামলার নামে সরকারি টাকা অপচয় করছেন।
কলকাতা হাইকোর্টে বছরে সরকারের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়, তার সিংহভাগই স্কুলশিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে। যে সব সরকারি অফিসারের গাফিলতির জন্য সরকারকে অকারণ বহু টাকা সুদ দিতে হচ্ছে, এর আগে বিভিন্ন মামলায় বিচারপতিরা তাঁদের চিহ্নিত করে তাঁদের বেতন থেকে সুদের টাকা কেটে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও স্কুলশিক্ষা দফতরের হেলদোল দেখা যায়নি। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকা কিছু ব্যক্তি জেনেবুঝে মামলা লড়ার ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় অকারণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
আবেদনকারী সত্যগোপাল মিশ্রের আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, ২০০৩ সালে আবেদনকারীর বাবা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পঙ্কজ মিশ্র কর্মরত অবস্থায় মারা যান। সরকারি নিয়ম মেনে আবেদনকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য আবেদন করেন। এ ক্ষেত্রে মানবিক কারণে পরিবারের এক জনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার নিয়ম আছে। স্কুলশিক্ষা দফতর চাকরি দেয়নি। সত্যগোপালবাবু হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট তাঁকে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল মামলা করে। ডিভিশন বেঞ্চও চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। স্কুলশিক্ষা দফতর সেই নির্দেশও অমান্য করে। নির্দেশ অমান্য করার জন্য ডিভিশন বেঞ্চ যখন স্কুলশিক্ষা অধিকর্তাকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলে, তখন স্কুলশিক্ষা দফতর হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। সুপ্রিম কোর্ট একই নির্দেশ দেয়।
ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, কর্মরত অবস্থায় কোনও শিক্ষকের মৃত্যু হলে যাতে তাঁর পরিবার বিপন্ন না হয়, সে দিকে খেয়াল রেখে রাজ্য মানবিক কারণে পরিবারের এক জনকে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য আবেদনকারীকে আদালতে আসতে হবে কেন? কেন হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও স্কুলশিক্ষা দফতর মামলা লড়ার খরচ পরিমাণ বাড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়তে যাবে? শিক্ষা দফতরের এই কাণ্ডকারখানা সম্পর্কে মন্ত্রী যাতে অবহিত হতে পারেন, তাই মামলার রায় মন্ত্রীর কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। |
|
|
|
|
|