|
|
|
|
বিভাগ, স্টারও ফিরতে পারে উচ্চ মাধ্যমিকে |
গ্রেড থেকে পিছু হেঁটে নম্বরে ফিরতে চায় সংসদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পাঁচ বছর আগে চালু হয়েছিল গ্রেড।
এত দিন পরে ফের নম্বর ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাইছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
এটা যে কার্যত ‘পিছনে হাঁটা’ই হবে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন সংসদ-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ‘সামাজিক চাহিদা’র কথা মাথায় রেখেই তাঁরা মার্কশিটে মোট নম্বর ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী বলে বুধবার জানিয়েছেন।
এর পাশাপাশি একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ধাঁচ বদলে ফেলে অনেকটা উচ্চ মাধ্যমিকের মতোই করতে চায় সংসদ। এখন যে-স্কুলের পরীক্ষা, সেখানকার শিক্ষকেরাই উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করেন। প্রশ্নপত্র পাঠায় সংসদ। নতুন ব্যবস্থায় সংসদ এক-একটি অঞ্চল ভাগ করে নিয়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করাতে চাইছে। অর্থাৎ নিজের স্কুলের শিক্ষকেরা নন, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের খাতা দেখবেন বাইরের শিক্ষকেরা। শুধু তা-ই নয়, একাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে পড়ুয়াদের মন ফেরানোর দাওয়াই হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরও উল্লেখ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদ।
সংসদ-কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁদের এই সব সিদ্ধান্ত বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের গড়া পাঠ্যক্রম কমিটির কাছে। তারা সায় দিলে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে সিদ্ধান্তগুলি বলবৎ করা হবে। সংসদের এ দিনের সিদ্ধান্তগুলি ঘিরে ইতিমধ্যেই মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। সরকারের গড়া পাঠ্যক্রম কমিটির একাধিক সদস্যই এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এখন উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে প্রতিটি বিষয়ের পাশে নম্বর ও গ্রেড দেওয়া থাকলেও মোট নম্বরের উল্লেখ থাকে না। সংসদের সিদ্ধান্ত, এই পদ্ধতি বদলে ফেলে উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে সব বিষয়ের নম্বর এবং দু’টি ভাষা এবং তিনটি বিষয়ে প্রাপ্ত মোট নম্বর দেওয়া হবে। বিষয়-ভিত্তিক গ্রেডের পরিবর্তে মোট নম্বরের নিরিখে গ্রেড দেওয়া হবে পরীক্ষার্থীদের। এর জন্য আট দফা গ্রেডিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।
দেশের সব স্কুল বোর্ডের সংগঠন ‘কবসে’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নম্বর থেকে ক্রমাগত গ্রেডের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেটাই মেনে চলে সব বোর্ড। কারণ, সকলেই মেনে নিয়েছিল, এক-দুই নম্বরের ব্যবধানে পড়ুয়াদের মধ্যে মেধার ফারাক করাটা শিক্ষাবিজ্ঞানসম্মত নয়। এখন গ্রেডের সঙ্গে নম্বর থাকলেও ভবিষ্যতে শুধু গ্রেড রেখে নম্বর সরিয়ে দেওয়াটাই লক্ষ্য।
তা হলে পশ্চিমবঙ্গ হঠাৎ উল্টো পথে হাঁটবে কেন?
সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, “মার্কশিটে মোট নম্বরের উল্লেখ না-থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিষয়-ভিত্তিক নম্বর যোগ করেই ছাত্র ভর্তির তালিকা তৈরি করে। কাজেই গ্রেড দেওয়া হলেও সেটার কোনও গুরুত্ব নেই। জোর দেওয়া হয় নম্বরেই।”
কিন্তু গত পাঁচ বছরও তো উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে কলেজে ছাত্র ভর্তি হয়েছে। তা হলে এই ‘পিছনে হাঁটা’র কারণ কী?
সভাপতির জবাব, “সমাজ যদি চায়, তা হলে পিছনে হাঁটতে হতে পারে। পিছনের সবই তো খারাপ ছিল না।” তিনি জানান, ২০১৪-র উচ্চ মাধ্যমিক থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। সভাপতি জানান, স্কুলশিক্ষা দফতরের গড়া পাঠ্যক্রম কমিটি সুপারিশ করলে ডিভিশন, স্টার ইত্যাদিও ফিরতে পারে উচ্চ মাধ্যমিকে।
রাজ্য সরকারের গড়া স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটির অন্যতম সদস্য মর্মর মুখোপাধ্যায় মনে করেন, গ্রেড থেকে নম্বরে ফিরে যাওয়ার যুক্তি নেই। তাঁর কথায়, “নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থাটাই অবৈজ্ঞানিক। তা ছাড়া এ দেশে ১৯৭২ সাল থেকে ক্রমাগত চেষ্টার পরে গ্রেড ব্যবস্থার দিকে কিছুটা এগোনো গিয়েছে। এখন আবার আগের জায়গায় ফেরার কারণ দেখি না।” একাদশ শ্রেণিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ধাঁচে পরীক্ষাও ব্যবস্থাপনায় বাড়তি সমস্যা তৈরি করবে।
পাঠ্যক্রম কমিটির অন্য এক সদস্য মনে করেন, ছাত্রদের একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠনে মনোযোগী করার লক্ষ্যে ওই পরীক্ষার নম্বর উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে দেওয়াটা খুব সমীচীন হবে না। কারণ, কোনও ছাত্রের একাদশ শ্রেণির নম্বর খুব সন্তোষজনক না-হলেও সারা জীবন উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে তা বয়ে বেড়াতে হবে। ওই সদস্যের কথায়, “কোনটায় পড়ুয়াদের ভাল হবে, সেটাই দেখা উচিত। পড়ুয়ারা পড়ছে না বলে তাদের উপরে জবরদস্তি করাটা কোনও যুক্তির কথা নয়।”
আইএসআই-এর অধ্যাপক অভিরূপ সরকার অবশ্য সংসদের সিদ্ধান্তগুলিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, গ্রেড চালু থাকলেও বাস্তবে নম্বরের প্রয়োজনই বেশি। সেটা ভর্তিই হোক বা অন্য প্রয়োজন। আর একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বর উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিটে থাকলে ছেলেমেয়েরা ওই ক্লাসের পড়াটা একটু মন দিয়ে শিখবে। সংসদ-সভাপতিও বলেন, “ভার কমাতে গিয়ে একাদশের গুরুত্বই হারিয়ে গিয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।” মুক্তিনাথবাবু জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে কোনও পরীক্ষার্থী চাইলে নম্বর বাড়ানোর সুযোগ পাবেন। এই নিয়মও ২০১৪ থেকেই কার্যকর হবে। সভাপতি বলেন, “সর্বোচ্চ দু’টি বিষয়ে ফের পরীক্ষা দিয়ে নম্বর বাড়ানোর সুযোগ পাবেন ছাত্রছাত্রীরা। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর তিন মাসের মধ্যে তাঁদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এতে পরীক্ষার্থীদের বছর নষ্ট হবে না। তবে ফের পরীক্ষা দিয়ে যদি কারও নম্বর কমেও যায়, তা হলেও এই পরিবর্তিত নম্বরই মেনে নিতে হবে তাঁদের।”
এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন ছ’লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী। সুযোগ পেলে তাঁদের অনেকেই নম্বর বাড়ানোর জন্য পরীক্ষায় বসবেন। ফের তাঁদের পরীক্ষা নিয়ে খাতা দেখে ফল প্রকাশ করতে যতটা সময় লাগবে, তত দিনে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজেই স্নাতক স্তরের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। মুক্তিনাথবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে নেওয়া হবে।” ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের জন্যও সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার বন্দোবস্ত করতে চায় সংসদ। |
|
|
|
|
|