|
|
|
|
খাল কাটা নিয়ে গ্রামবাসী-প্রশাসন চাপানউতোর |
জমা জল না সরায় বাড়ছে দুর্গতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
এলাকায় জল ঢোকার পরে তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। থেমে গিয়েছে বৃষ্টিও। তবু উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের স্বরূপনগরের প্লাবিত গ্রামগুলি থেকে সরছে না জল। জমা জল থেকে ইতিমধ্যেই দুর্গতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ডায়েরিয়া-সহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। পাশাপাশি বনগাঁ, গাইঘাটা থেকে জল নামার কারণে স্বরূপনগরের সগুনা, চারঘাট, তেঁপুল-মির্জাপুর ইত্যাদি এলাকার জল বাড়ছে। জমা জল না সরায় বাড়ছে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের সোনাই নদী, বিল ও বাওড়-সহ বনগাঁ ও গাইঘাটা এলাকার জল নামার ফলে স্বরূপনগরের নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হয়েছে। এই সব এলাকায় আগেই জল জমে ছিল। কিন্তু এখন আরও জল বাড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠছে। সব্জির বারোটা আগেই বেজে গিয়েছিল। এখন ধানের বীজতলাও জলের নীচে থাকতে থাকতে পচতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় পুজোর মুখে কী ভাবে আর্থিক ক্ষতির ধাক্কা সামলাবেন তা ভেবে মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। এই সব এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, যে কোনও উপায়ে প্রশাসন জল সরানোর ব্যবস্থা না করলে তাঁদের না খেয়ে মরতে হবে। এখন রমজান চলছে। কয়েক দিন পরেই ঈদ উৎসব। তার পরেই দুর্গাপুজো। কিন্তু জমা জলে উৎসবের সব আনন্দই ডুবে গিয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, চারঘাট পঞ্চায়েত এলাকায় শতাধিক বিঘা জমি নিয়ে টিপি পার্কের উত্তর ও পশ্চিমে যমুনা নদী। পূর্বে রয়েছে আর এক নদী ইছামতী। দক্ষিণে টিপি গ্রামের বিল জমি। ২০০০ এবং ২০০৪ সালে স্বরূপনগর ব্লকে বন্যার বড় কারণ ছিল ইছামতী ও যমুনার নাব্যতা হারানো। বছরের পর বছর নদীগর্ভে পলি জমতে জমতে নাব্যতা কমার পাশাপাশি নদীর বুকে মাছের ভেচাল থেকে শুরু করে ধানচাষ, পাটচাষ সবই চলছে। এমনকী বেশ কিছু জায়গায় নদীর মধ্যে মাটির ছোট বাঁধ দিয়ে জল ধরে মাছের চাষও করা হচ্ছে। টিপির কাছে ইছামতী ও যমুনার মোহনার কাছে বিরাট এক জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে টিপি পার্ক। ওই জায়গাতেই যমুনা নদী প্রায় আড়াই কিলোমিটার ঘুরপথে গিয়ে ইছামতী নদীতে মেশায় জলের স্রোত কমে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে নদীর বুক থেকে এই সব দখল হটিয়ে টিপি গ্রামের কাছে দেড়শো মিটার খাল কেটে যদি দু’টি নদীকে যুক্ত করলে স্রোতের গতি বাড়বে। ২০০০ সালে জেলায় ভয়াবহ বন্যার পরে টনক নড়ে প্রশাসনের। শুরু হয়, নদীর বুক থেকে সমস্ত দখলদারি হটানোর কাজ। কিন্তু খাল কেটে দুই নদীকে যোগ করার কাজ আর হয়নি। |
|
যে জায়গায় খাল কাটতে হবে। ছবি: নির্মল বসু। |
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অলোক মণ্ডল বলেন, “খাল কাটার জন্য প্রশাসন টিপি গ্রামে ১৮ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু খাল কাটার কাজ আর হয়নি। ২০০৪ সালে ফের বন্যার কবলে পড়ে স্বরূপনগর ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম। ফের ওঠে খাল কেটে দুই নদীকে যুক্ত করার প্রশ্নটি। ইছামতী নদীতে ড্রেজার নামিয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয় টিপিতে খাল কাটার। টিপির কাছে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু হয় যমুনা নদীর বাঁধ বাধার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার বেশি আর কিছুই হয়নি।”
স্থানীয় বীরেনচন্দ্র হালদার, বিজলী মণ্ডলরা জানালেন, অবিলম্বে যমুনা নদী, পদ্মা ও টিপি খাল সংস্কার করে ইছামতীতে জমা জল পড়ার ব্যবস্থা না করলে বড় রকমের বিপদে পড়বেন তাঁরা। খাল কাটার বিষয়ে মহকুমা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, গ্রামবাসীদের একাংশের বাধায় ওই খালা কাটা সম্ভব হয়নি। যদিও গ্রামবাসীরা প্রশাসনের এই দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। টিপি গ্রামের জয়দেব হালদার, মোল্লাডাঙার রামপ্রসাদ সর্দাররা বলেন, “আমরা চাই গ্রামের মধ্যে দিয়ে খাল কেটে দুই নদীকে মিলিয়ে দেওয়া হোক। তা হলে আর বন্যায় এখানকার মানুষকে দুর্গত হতে হবে না। ফসলও বাঁচবে। শুধু খালের অপরদিকে চাষের জমিতে যাওয়া আসার জন্য কংক্রিটের সেতু তৈরি করে দিক প্রশাসন। তা না হলে ওই সব জমিতে চাষ করা যাবে না।”
স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “তেঁতুলিয়া থেকে কাবিলপুর পর্যন্ত ঠিকমতো ইছামতীর সংস্কার না হওয়ায় পলি জমে তলদেশ উঁচু হয়ে গিয়েছে। ফলে যমুনা দিয়ে নামা বনগাঁ, গাইঘাটার জমা জল ইছামতী দিয়ে বেরোতে পারছে না। ইছামতী ছাপিয়ে তা ভাসিয়ে দিচ্ছে গ্রাম। অবিলম্বে যমুনা নদী, টিপি খাল সংস্কাররের পাশাপাশি তেঁতুলিয়ার দিকে ইছামতী নদী সংস্কারের ব্যবস্থা করা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
বসিরহাটের মহকুমাশাসক অনামিকা মজুমদার বলেন, “আপাতত দুই নদীর মাঝের অংশ কেটে জল সরানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ওখানে এখন একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হবে। তবে জল না সরলে তা সম্ভব হচ্ছে না।”
|
|
|
|
|
|