চমক মেসিদের খাবারে, যুবভারতীর মাংস-দূষণেও
যুবভারতীর সরগরম হওয়ার অনেক আগেই সেজে উঠবে আর্জেন্তিনা-হোটেলের রান্নাঘর।
মেসি-আগুইয়েরারা শহরে পৌছানোর পাঁচ দিন আগেই কলকাতায় পৌঁছে যাচ্ছেন আর্জেন্তাইন শেফ। স্টেডিয়াম সংলগ্ন যে হোটেলে আলেজান্দ্রো সাবেইয়ার টিমের থাকার কথা, সেখানকার কারিগরদের রান্নার মহড়া দেবেন তিনি। নিজেও হাত লাগাবেন। বিশ্বের অন্যতম হাইপ্রোফাইল টিমের চার বেলার খাদ্য-তালিকা হোটেলের হাতে এসে পৌঁছেছে বুধবার সকালে। আর্জেন্তিনা ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে হোটেল এবং উদ্যোক্তাদের পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, খাবারদাবারের ব্যাপারে কোনও রকম সমঝোতা করা যাবে না। তালিকা অনুযায়ী খাবারের বাইরে কিছুই দেওয়া যাবে না। তালিকায় দেখা যাচ্ছে, জলের ব্যাপারে টিম ম্যানেজমেন্ট প্রচণ্ড সতর্ক।
মেসিদের সহকারী কোচ কামিনো-সহ তিন জনের যে দল কয়েক দিন আগে শহরে এসেছিল পরিস্থিতি বুঝতে, তাদের প্রথম পছন্দ ছিল স্টেডিয়াম সংলগ্ন হোটেলটি। প্রাথমিক ভাবে সম্মতি জানালেও ঘরের আসবাব এবং খাট নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। মোট ছাপ্পান্নটি ঘরের একটি তলাই পছন্দ করেছেন কামিনোরা। প্রত্যেক ঘরে দু’জন করে ফুটবলার থাকবেন। তবে তাঁদের জন্য আলাদা খাটের ব্যবস্থা করতে হবে। এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর ফুটবলার মেসির জন্য আলাদা কোনও ‘ব্যবস্থা’ রাখতে নারাজ কোচ সাবেইয়া। অন্য ফুটবলারদের মতো একই রকম ঘরে থাকবেন মেসি। কোনও বিলাসবহুল সুইটে নেবেন না কোচও। থাকবেন ফুটবলারদের সঙ্গেই। তবে কোচের ঘরের সঙ্গে ভিতরের দরজার মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ থাকবে সহকারী কোচেদের এ রকম ঘর প্রয়োজন। সে ব্যবস্থা অবশ্য করে ফেলেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। জিনিসপত্র রাখা এবং মাসাজের জন্য আরও চারটি ঘর রাখা হয়েছে।
ডেকরেটরসের দোকান এখনও চলছে যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল ।সরকার
তবে ভাল ঘরের পাশাপাশি রান্নাঘর এবং খাওয়ার জায়গা নিয়ে প্রচণ্ড খুঁতখুঁত করছিলেন কামিনো এবং আর্জেন্তিনা টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা। হোটেল সূত্রের খবর, অন্তত তিন বার কামিনোরা হোটেলের শেফ-দের সঙ্গে মিটিং করেছেন। বুঝিয়েছেন কী ভাবে খাবার রাখা হবে। কোথায় কী রাখা হবে। ফুটবলারদের সঙ্গে টেকনিক্যাল লোক-জনদের খাওয়ার জায়গা আলাদা করতে বলে গেছেন কামিনোরা। হোটেলের কাছে মেসিদের যে খাদ্য-তালিকা এসে পৌঁছেছে, তাতে দুপুর এবং রাতের খাবারের মেনু প্রায় একই রকম। রাতের খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত থাকবে ‘রেড ওয়াইন’। ব্রেকফাস্টের তালিকা বরং বেশ লম্বা। মাঠে প্যাকেট করে যে খাবার নিয়ে যাওয়া হবে তাতে রয়েছে শুয়োরের মাংসের স্যান্ডউইচ, চিজ এবং পাঁউরুটি। এ ছাড়াও কলা ও আপেল।
খাদ্য তালিকায় চোখ বুলিয়ে দেখা যাচ্ছে সেদ্ধ ডিমের সঙ্গে টুনা মাছ থাকছে দু’বেলাতেই। শুয়োরের মাংস ছাড়া অন্য কোনও মাংস পছন্দ নয় মেসিদের। আশ্চর্য ভাবে মুরগি বা গরুর মাংস বাদ তালিকায়। ফলের মধ্যে আপেল, কলা, কমলালেবু থাকছে। থাকবে কমলালেবু, আঙুর-সহ নানা ধরনের ফলের রস, আইসক্রিম। বিভিন্ন রকমের সোডা ওয়াটার।
আর্জেন্তিনার জাতীয় দলের মেনু
ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ও ডিনার
কফি, চা, ঠাণ্ডা ও গরম দুধ
কমলালেবু ও মোসাম্বির রস
মিনারেল ও স্পার্কলিং ওয়াটার
বিভিন্ন ধরনের সোডা ওয়াটার
বিভিন্ন স্বাদের দই
বিভিন্ন স্বাদের কর্নফ্লেক্স
শুকনো ফল (চিনে বাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম)
তাজা ফল (কলা, আপেল, কমলালেবু)
সাদা ফরাসি রুটি ও বান
পাঁউরুটি
রান্না করা হ্যাম ও চিজ
বিভিন্ন ধরনের জেলি ও মধু
ক্রোয়াসঁ, হ্যাম ও চিজ দিয়ে স্যান্ডউইচ

স্যালাড (টম্যাটো, লেটুস, সেদ্ধ ডিম, গাজর, পেঁয়াজ,
বিভিন্ন ধরনের সব্জি ও টুনা মাছ)
অলিভ অয়েল, ওয়াইন ভিনিগার, লেবুর রস, নুন ও মরিচ
কমলা ও মোসাম্বির রস
মিনারেল ও স্পার্কলিং ওয়াটার
নরম পানীয়
সাদা ফরাসি রুটি ও বান, ক্র্যাকার্স
রান্না করা ও সেদ্ধ হ্যাম
বিভিন্ন ধরনের চিজ
পার্মিসন চিজ
পাস্তার জন্য টম্যাটো সস, বোলোনেসা সস ও বেকামেল
বিভিন্ন ধরনের ফল, বিভিন্ন স্বাদের আইসক্রিম, সিরাপ
রেড ওয়াইন (চার জনের জন্য এক বোতল, শুধু ডিনারে)
ম্যাচের দিন স্টেডিয়ামে
হ্যাম ও চিজ স্যান্ডউইচ,রুটি, কলা, আপেল
মেসিরা মাংস নিয়ে তেমন আগ্রহী না হলেও যুবভারতী গিয়ে কিন্তু সারাক্ষণ পোড়া মাংসের গন্ধ শুঁকতে হবে। উদ্যোক্তা সেলিব্রিটি ম্যানেজমেন্টের লোকজন যখন কলকাতার একটি হোটেলে প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে একটি স্টাডি গ্রুপ করার ব্যাপারে আলোচনা করছেন, তখন মেসিদের খেলার জন্য নতুন করে সেজে ওঠা স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেল, ক্রীড়ামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পোড়া মাংসের গন্ধদূষণ ছড়ানো বন্ধ হয়নি। স্টেডিয়ামের পাঁচটি র্যাম্প বন্ধ করে তৈরি হোটেলের রান্নাঘরের চিমনি থেকে বেরোনো গ্যাস উগরে দিচ্ছে মাঠের ভিতর। গ্যালারির নীচ দিয়ে। যা হাজার হাজার টাকার টিকিট কেটে আসা দর্শকদের তো বটেই, মেসিদের গা গুলিয়ে ওঠার পক্ষেও যথেষ্ট। পাল্লা দিয়ে বাসের গ্যারাজ থেকেও ছড়াচ্ছে দূষণ। জোড়াতাপ্পি দিয়ে স্টেডিয়াম তৈরির চেষ্টা জারি থাকলেও কোনও অংশই এখনও সম্পূর্ণ নয়। সমালোচনায় পড়ে ডেকরেটার্সদের বাঁশ লুকোনো হচ্ছে মাঠের পাশের বড় বড় টিনের চালার ভিতর বা একটু দূরে। যাতে ম্যাচ হয়ে গেলেই তা আবার স্টেডিয়ামের পুরনো জায়গায় দ্রুত নিয়ে আসা যায়।
বাইপাসের ধারে স্টেডিয়াম সংলগ্ন মেসিদের থাকার হোটেলের ঘর থেকে শুরু করে রান্নাঘর পর্যন্ত তৈরি হয়ে গেলেও, যুবভারতী শেষ পর্যন্ত কতটা ঝকঝকে হয়ে উঠবে তা নিয়ে প্রশ্ন তাই থাকছেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.